বৈধ হওয়ার প্রমাণ দিতে অ্যাম্বুলেন্সে হাজির ভোটার! নাগরিক হয়রানির নয়া রূপ শুনানি?

December 29, 2025 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১০:৪৭: ভোগান্তির নাম শুনানি। প্রবীণ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, অসুস্থ, রোগাক্রান্ত, সন্তানসম্ভবা কারও রেহাই নেই! কোথাও সিঁড়ি ভেঙে তিনতলায় উঠতে হচ্ছে আবার কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টার লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের মধ্যেও ঘাম ছুটছে ভোটারদের। মনে বাদ পড়ে যাওয়ার ভয়। গোটা বাংলায় শুনানির চিত্রটা মোটামুটি এ রকমই। এতেই প্রশ্ন উঠছে, শুনানি কি প্রাতিষ্ঠানিক নাগরিক হয়রানি?

ভোটারদের শঙ্কা, ‘‘আমাদের নামগুলো বোধহয় বাদই চলে যাবে!’’ কেউ কেউ পদবি বদলের জন্য পূর্বপুরুষদের দুষছেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন একটাই, আমরা নাকি ভোটার নই? যে দেশে জন্মেছি, সে দেশে এখন প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে! অনেকে ডাকার কারণ জানেন না, কেন ডাকা হয়েছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না। নথি দেখানোর পরেও সমস্যার সুরাহা কীভাবে, বুঝতে পারছেন না অনেকে। কিউআর কোডে ভুল থাকায় ডাকা পাচ্ছেন কেউ কেউ।

প্রায় ৩২ লক্ষ ভোটার, যাঁরা ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে যোগসূত্র দেখাতে পারেননি, শুনানির এই পর্বে তাঁদেরই ডাকা হচ্ছে। কেউ কাজে ছুটি নিয়ে সকাল থেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন, কেউ এসেছেন অসুস্থ শরীরে। কেউ এসেছেন হুইলচেয়ার, কেউ বা অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে ভোটারদের। আবার ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগও উঠছে। অভিযোগ, নথি অনুযায়ী ফর্ম পূরণ করার শুনানিতে ডেকে বলা হয়েছে, ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে। ম্যাপিং দেখানোর পরেও বলা হচ্ছে তথ্য মিলছে না। ফুলবাগানের একটি স্কুলে শুনানি কেন্দ্র করেছে কমিশন। সেখানে অ্যাম্বুল্যান্সে হাজির হয়েছিলেন ৭৩ বছরের স্বপ্না ঘোষ।

বেলগাছিয়া উর্দু হাইস্কুলে শুনানির ডাক পড়েছে ৬১ বছরের অমিতাভ খাসনবিশের। কাশীপুর বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বীরপাড়া লেনের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তিনি। ২০০২-র লিস্টেও নাম আছে। তাও ডাক পড়েছে শুনানিতে। ৪০ বছর ধরে ভোট দেওয়ার, পরও কেন এই হেনস্থা? প্রশ্ন তাঁর। শ্যামপুকুর কেন্দ্রের বাসিন্দা বৃদ্ধা রেখা দাস ও তাঁর স্বামীর ডাক পড়েছে বাগবাজার মাল্টিপারপাস হাইস্কুলে। তাঁরও নাম রয়েছে ২০০২-এর লিস্টে। তারপরও শুনানিতে ডাক! রামকৃষ্ণ লেন বাগবাজারের আদি বাসিন্দা, ২০০২-এর লিস্টে নাম রয়েছে। তাঁকেও ডাকা হয়েছে। সকাল থেকে এসে বাগবাজার মাল্টিপারপাস স্কুলে লাইন দিয়েছেন প্রমাণপত্র হাতে। ৯৬ বছর বয়সে এসেও কমিশনকে নাগরিকত্বের প্রমাণ এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকার জন্য কাগজ দেখাতে হবে, এমনটা ভাবতেই পারছেন না দিনহাটা ১ ব্লকের বড় আটিয়াবাড়ি পঞ্চায়েতের নিখিলচন্দ্র সরকার। বয়স ৯৬ পেরিয়েছে। ইতিমধ্যে দু’বার স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। বয়সের ভার ও অসুস্থতার কারণে হাঁটতেও পারেন না। তাঁর নামে এসেছে নোটিশ। রবিবার স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে অসুস্থ শরীরে ভোটার কার্ড, শুনানির নোটিশ নিয়ে বিডিও অফিসে হাজির হয়েছেন নিখিল সরকার। বাঁকুড়া থেকে তারকেশ্বরে শুনানিতে এসে হয়রানির শিকার হলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা আরতি রাহা। তারকেশ্বরের মুক্তারপুরের বাসিন্দা আরতি রাহা। ভোটার কার্ডে তাঁর বয়স ৮১ বছর। স্বামী ভগবানচন্দ্র রাহা ছিলেন কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠের অধ্যাপক। আরামবাগ ও গোঘাট বিধানসভা এলাকার পুরনো বাসিন্দা। শনিবার সকালে দীর্ঘ ১৩০ কিলোমিটার পথ গাড়িতে তারকেশ্বরে আসেন বৃদ্ধা। মেয়ের দাবি, মায়ের শারীরিক সমস্যা আছে। মনে রাখতে পারেন না।

পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ব্লক ২ বিডিও অফিসে শুনানিতে এসেছেন ২৭ বছরের তরুণী বন্দনা মণ্ডল। বাড়ি চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সঙ্গে ছিলেন স্বামী পেশায় কৃষক শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল। এই অবস্থায় কেন তাঁকে ছুটে আসতে হল, প্রশ্ন তাঁর। সাফ কথায়, শুনানির নামে চলছে বয়স্ক ও বৈধ ভোটারদের হেনস্থা করা হচ্ছে, এমনই অভিযোগ তৃণমূল সহ অবিজেপি দলগুলির।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen