বিধানসভার কড়চা: দিনভর কী কী চলল বাংলার আইনসভায়?
সরকার ও বিরোধী শিবিরের বিধায়কদের বাকবিতণ্ডায় দিনভর উত্তপ্ত থাকল বিধানসভা। রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন বাংলার মন্ত্রীরা।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৩৬: চলছে রাজ্য বিধানসভার বাদল অধিবেশন। সরকার ও বিরোধী শিবিরের বিধায়কদের বাকবিতণ্ডায় দিনভর উত্তপ্ত থাকল বিধানসভা। রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন বাংলার মন্ত্রীরা।
দিনভর কী কী চলল দেখে নিন এক নজরে
দ্য নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অফ স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ বিল, ২০২৫:
দক্ষ ও পেশাদার ক্রীড়াবিদ গড়ে তুলতে প্রথম বেসরকারি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলায়। প শুক্রবার বিধানসভায় ‘দ্য নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অফ স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ বিল, ২০২৫’ পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। হুগলি চুঁচুড়ায় গড়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয়। স্পোর্টস সায়েন্স, স্পোর্টস টেকনোলজি, স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, স্পোর্টস-ল এবং কোচিং নিয়ে পঠনপাঠনের সুযোগ মিলবে এখানে।
বিল পেশের সময় অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে বিল আটকানোর চেষ্টা করেন বিজেপি বিধায়করা। বিরোধীরা বক্তব্য রেখে কক্ষ ত্যাগ করায় তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অধ্যক্ষ।
ই-জাগৃতি (E-Jariti) পোর্টাল:
পরিষেবা ক্ষেত্রে বা জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে ঠকে গেলে বা বঞ্চনার শিকার হলে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ হচ্ছে। চালু হয়েছে ‘ই-জাগৃতি’ (E-Jariti) পোর্টাল। শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্যের উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র, বিধায়ক সমীর কুমার জানার প্রশ্নের উত্তরে জানান, রাজ্যে ‘ই-দাখিল’ নামে একটি ব্যবস্থা চালু ছিল। এখন আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ‘ই-জাগৃতি’ চালু হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-দাখিল ব্যবস্থায় মোট ৩৫৯৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে, নিষ্পত্তি হয়েছে ১৭০৫টি। বাকিগুলির নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চলছে।
মহিলাদের আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ণ:
শুক্রবার বিধানসভায় মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান রাজ্যের ২.১৫ কোটি মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে সহায়তা পাচ্ছেন। বাংলায় মহিলাদের আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ণ ও সচেতনতা বেড়েছে। এছাড়াও ৯৩ লক্ষের বেশি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো শুধু ভাতা দেওয়ার জন্য নয়, নারীর সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
গার্হ্যস্থ হিংসার রুখতে পদক্ষেপ:
শুক্রবার বিধানসভায় মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, গার্হস্থ্য হিংসা রুখতে রাজ্যের ২৩টি জেলায় ২৮ জন প্রোটেকশন অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। একাধিক অফিসার নিযুক্ত রয়েছেন বড় জেলাগুলিতে। বিপদগ্রস্ত মহিলাদের জন্য চালু হয়েছে ৩৭টি শক্তি সদন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে সেগুলি পরিচালিত হচ্ছে।
লিঙ্গবৈষম্য হ্রাস:
মন্ত্রী শশী পাঁজা আরও জানান, ২০২৩-২৪ সালে রাজ্যে মহিলা ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যার পার্থক্য ছিল ১৩ লক্ষ। ২০২৪-২৫ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ লক্ষে।
কেন্দ্রের চাইল্ড বাজেট হ্রাস সত্ত্বেও রাজ্যের পদক্ষেপ:
২০১৭ সালের পর থেকে শিশুপুষ্টি প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু নারী ও শিশু বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, ২০১৭ সালে নির্ধারিত পরিমাণই এখন পর্যন্ত বহাল আছে। শুক্রবার বিধানসভায় হুগলির কিছু আইসিডিএস কেন্দ্র বন্ধ থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী জানান, হুগলিতে কোনও আইসিডিএস কেন্দ্র বন্ধ হয়নি। বর্তমানে সেখানে ৬৭০৮টি কেন্দ্র চালু রয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথভাবে চলা পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ বাড়াতে বহুবার আবেদন জানানো হয়েছে।
মন্ত্রী শশী পাঁজার আরও সংযোজন, “২০১৪-১৫ সালের পর কেন্দ্রের চাইল্ড বাজেট ৪.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। এই বঞ্চনার মধ্যেই রাজ্য সরকার লড়াই করে যাচ্ছে। আমরা মর্নিং স্ন্যাক্স দিচ্ছি, পুষ্টি পাউডার না থাকলে ছাতু সরবরাহ করছি যাতে ক্যালোরি ঠিক থাকে।”
বাংলায় শিশুশ্রম প্রায় নির্মূল:
প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক শুক্রবার জানান, রাজ্যে শিশুশ্রম প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বাংলা। জাতীয় শিশু শ্রমিক প্রকল্প বন্ধ হয়েছে রাজ্যে। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছে শিশু শ্রমিকরাও। মন্ত্রী আরও বলেন, “শিশু ও কিশোর শ্রমনিরোধক আইনের আওতায় নিয়মিত অভিযান চলে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নের সহায়তায় সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হচ্ছে।”
মলয় ঘটক জানান, ২০২০ সালে বাংলায় ১৪ জন শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছরই সংখ্যা কমেছে। ২০২১ সালে শিশুশ্রমিক উদ্ধার হয়েছিল ৬ জন। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ১।
বজবজের নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলের পুনরুজ্জীবনে ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয়:
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা বজবজের নিউ সেন্ট্রাল জুট মিল ফের চালু করতে পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার বিধানসভায় বিধায়ক অশোক কুমার দেবের দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের জবাবে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, জুট মিলের পুনরুজ্জীবন চেষ্টায় ইতিমধ্যে মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯টি বৈঠক হয়েছে। শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ফাওলাই প্রকল্পের আওতায় ২,৮৭০ জন শ্রমিককে প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা ও উৎসব উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত ১,৫০০ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রসঙ্গত, নিউ সেন্ট্রাল জুট মিল কোম্পানি লিমিটেডের অধীনস্থ দুটি ইউনিট; অ্যালবিয়ন ও লোথিয়ান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়চণ্ডীপুরে অবস্থিত। প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক সেখানে একসময় কাজ করতেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মিলটি লিকুইডেশনের আওতায় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।