তর্পণে ‘মগজখেকো অ্যামিবা’-র আতঙ্ক! কী বলছেন চিকিৎসকরা?

September 20, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৫০: মহালয়ার সকালে বাঙালির অন্যতম ধর্মীয় আচার তর্পণ। পূর্বপুরুষের উদ্দেশে নদী বা জলাশয়ে নামেন বহু মানুষ। তবে এ বছর তর্পণ ঘিরে দুশ্চিন্তা বেড়েছে ‘মগজখেকো অ্যামিবা’ নিয়ে। কেরালায় সম্প্রতি একের পর এক মৃত্যু হয়েছে নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি সংক্রমণে। ইতিমধ্যেই সেখানে প্রায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাতেও এ ধরনের অ্যামিবা ধরা পড়েছে, ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, কেরালার অ্যামিবার সঙ্গে বাংলার অ্যামিবার পার্থক্য রয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ এই অ্যামিবা নদীর জলে জন্মায় না এবং স্রোতযুক্ত জলে দেখা যায় না। ফলে যারা নদীতে তর্পণ করবেন, তাঁদের জন্য কোনও আশঙ্কা নেই।

 

তাঁর পরামর্শ, পাড়ার নোংরা পুকুর বা অপরিষ্কার ডোবা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। প্রয়োজনে ব্লিচিং পাউডার বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে জল পরিষ্কার করতে হবে। বাংলার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘আকান্থামিবা’ সংক্রমণ দেখা যায়, যা তুলনায় কম মারাত্মক এবং সময়মতো চিকিৎসা করলে সারানো সম্ভব।

 

ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, বাংলার নোংরা জমা জলে যে অ্যামিবা পাওয়া যায়, তার বংশ ও প্রজাতি কেরালার অ্যামিবার তুলনায় আলাদা। এই অ্যামিবার মারণক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 

তিনি আরও জানান, বাংলার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাকান্থামিবা সংক্রমণ দেখা যায়, যা গ্রানুলোম্যাটাস অ্যামিবিক এনসেফালাইটিস (জিএই) তৈরি করে। এটি সাধারণত একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ, এবং সময়মতো রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই ধরনের অ্যামিবার বাসস্থান সাধারণত দূষিত ও বদ্ধ জল, তাই এমন জলে স্নান না করাই নিরাপদ।

 

গত দুই বছরে বাংলায় ২৫ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই অ্যামিবায়, যদিও ৭০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে। এ বছরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, পুকুর বা ডোবার মতো বদ্ধ ও দূষিত জলাশয়ে অ্যামিবার উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাই এমন জায়গায় স্নান করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ, এই প্রোটোজোয়া যদি সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইডে প্রবেশ করে, তাহলে তা মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করতে শুরু করে। আক্রান্ত অংশের নিয়ন্ত্রণে থাকা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে- যেমন পক্ষাঘাত, স্মৃতিভ্রংশ, খিঁচুনি বা চিনতে না পারার সমস্যা।

 

এই রোগ নিশ্চিত করতে হলে লাম্বার পাঞ্চারের মাধ্যমে সিএসএফ (Cerebrospinal Fluid) নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে হয়। তবে সময়মতো রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা শুরু হলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। ডা. জোয়ারদার বলেন, “মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ ছড়ায় না। আর নদীর স্রোতের জলে এর অস্তিত্ব নেই। তাই তর্পণের ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen