১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ – কী হয়েছিল ঢাকায়?

রেসকোর্সে ভারতীয় কমান্ডর জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পন করেন ৯৩ হাজার সেনা সমেত পাকসেনা কমান্ডর লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে নিয়াজি। স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ।

December 16, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

১৬ ডিসেম্বর। দিনটি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিজয় দিবস। পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীও সেদিনটিকে বিজয় দিবস পালন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের দিনেই ঢাকার রমনা রেসকোর্সে ভারতীয় কমান্ডর জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পন করেন ৯৩ হাজার সেনা সমেত পাকসেনা কমান্ডর লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে নিয়াজি। স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ।

কলকাতা থেকে ঢাকা উড়ে গিয়েছিলেন অরোরা 

সেদিন কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর থেকে কয়েকজন সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে উড়ে যায় ভারতীয় সেনার হেলিকপ্টার। তাতে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, মেজর জেনারেল এফআর জোকব ও অন্যান্যরা। হেলিকপ্টারটি ঢাকার মাটি স্পর্শ করতেই ওঠে ‘জয় বাংলা’ রব। পাশাপাশি ছিল বাংলাদেশিদের তরফে ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জয়ধ্বনি। 

এরপর ১৯৭১ সালে এই দিনে পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি ঢাকার রমনা রেসকোর্সে ৯৩,০০০ সৈনিকদের সঙ্গে জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র 

আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে লেখা ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডিং চিফ লেফটেন্যান্ট জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হল। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।’ আর এই স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে ৯৩ হাজার পাক সেনা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে রওনা দেন আত্মসমর্পণ করবেন বলে।

দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ 

এই গৌরবময় দিনটির আগে মার্চ থেকে চলা দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হার্মাদরা। ১৩ দিনের যুদ্ধে বাংলাদেশে যুদ্ধরত ৩৯০০ ভারতীয় সেনাও শহিদ হন। ১০ হাজারেরও বেশি সেনা জখম হন যা পরবর্তী জীবনটাই বদলে দেয় তাঁদের।

৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হামলা চালায় 

৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনা যখন একযোগে ভারতের মোট এগারোটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়, সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা সেনা অভিযানের কথা ঘোষণা করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এরপর ১৩ দিন ধরে ধরে চলেছিল তীব্র যুদ্ধ। এই যুদ্ধের শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের কাছে যুদ্ধে হেরে আত্মসমর্পণ করে এবং এরপর পাকিস্তানের পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে।

১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকা পৌঁছায় 

যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা বাংলাদেশের অল্প কিছু জায়গাতেই তাদের সামরিক শক্তি সঙ্গবদ্ধ করে রেখেছিল। এদিকে যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও ভআরতীয় সেনার সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। আর সেদিনই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen