পলিগ্রাফ কী? নারকোর সঙ্গে ফারাক কতটা?

চার-পাঁচটি গ্রাফের তার একটি মেশিনের মাধ্যমে কম্পিউটারে যোগ করা হয় ও সব গ্রাফ কম্পিউটার স্ক্রিনে ধরা পড়ে।

August 30, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৯২১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার এক তদন্তে, বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়।

পলিগ্রাফ কী?
এটি লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা। মিথ্যা বলার সময় মানুষের নানা শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। সেগুলি থেকে জানা যায় অভিযুক্ত সত্যি বলছেন কি-না। ‘পলি’ কথার অর্থ ‘একাধিক’। এই পরীক্ষায় একাধিক গ্রাফ ব্যবহার করা হয়। মানুষ মিথ্যে বললে তার শরীরে রক্তচাপের পরিবর্তন হয়। কারও বুক ধড়ফড় করে, কারও ঘাম হয়। শারীরিক নড়াচড়া একটু বেশি হয়। মূলত চারটি গ্রাফ খতিয়ে দেখা হয়। ১) হার্ট রেট, ২) ব্লাড প্রেশার রেট, ৩) রেসপিরেশন রেট, ৪) গ্যালভ্যানিক স্কিন রেসপন্স (ভয়ের সময় ঘাম হলে তা ধরা পড়বে)। বায়োফিড মেশিনের দ্বারা চারটি গ্রাফ ধরা পড়ে। প্রতিটি গ্রাফ দেখার জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ড ও যন্ত্র আছে। উন্নত মানের পলিগ্রাফে মানবমস্তিষ্কের তরঙ্গদেরও স্ক্যান করা হয়। মানুষের ব্রেনে আলফা, বিটা, গামা, থিটা, চার রকমের তরঙ্গ রয়েছে। কেউ মিথ্যে বললে বিটা তরঙ্গ অধিক সক্রিয় হয়ে যায়। চার-পাঁচটি গ্রাফের তার একটি মেশিনের মাধ্যমে কম্পিউটারে যোগ করা হয় ও সব গ্রাফ কম্পিউটার স্ক্রিনে ধরা পড়ে।

পলিগ্রাফ কীভাবে করা হয়?
যাঁর পলিগ্রাফ করা হবে, তাঁকে খুব সাধারণ কিছু প্রশ্ন করা হয়। যেমন, আপনার নাম কী, আপনার বাড়ি কোথায়, আপনার বাবার নাম কী ইত্যাদি। যে তথ্য আগে থেকে তদন্তকারী অফিসারদের কাছে থাকে।
এসব প্রশ্নের উত্তরের সময় তাঁরা দেখেন স্বাভাবিক সময়ে সত্য বলার ক্ষেত্রে অভিযুক্তের শারীরিক গ্রাফের ওঠাপড়া কেমন থাকছে। ‘নিউমারিক্যাল কোয়ান্টিফিকেশন’-র উপর ভিত্তি করে অভিযুক্তের দেওয়া উত্তরগুলি যাচাই করা হয়। একই প্রশ্নে অন্তত তিনবার করে করা হয়।

টেস্ট কতটা নিখুঁত?
টেস্ট নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরীক্ষা ফলপ্রসূ হলেও, সাইকোপ্যাথ, স্বভাবে অপরাধী বা মাথা ঠান্ডা রেখে মিথ্যে বলাকে অভ্যেসে পরিণত করে নিয়েছেন— এমন মানুষজনের ক্ষেত্রে টেস্টের রিপোর্ট সবসময় নির্ভুল আসে না।

পলিগ্রাফ হবে, আগাম জানিয়ে দেওয়া হলে অভিযুক্ত যদি অ্যাংজাইটি কমানোর ওষুধ খেয়ে নেন বা শারীরিক পরিবর্তন প্রতিরোধের জন্য যেসব ওষুধ আছে, সেগুলি সেবন করলে পলিগ্রাফ টেস্ট নির্ভুল হয় না। অভিযুক্তকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করার পর পলিগ্রাফে বসালে সেই রিপোর্টও ঠিক আসবে না। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই টেস্ট মূলত নির্ভুল। তদন্তের গতিপ্রকৃতি এগতে এটি ব্যবহার করা হয়।

নারকো কী?
অপরাধী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে অন্যতম পরীক্ষা নারকো টেস্ট। অভিযুক্ত মিথ্যে বলছে কি না তা দেখতে এই পরীক্ষা করা হয়। যাঁর পরীক্ষা হচ্ছে, তাঁকে ইন্ট্রাভেনাসভাবে স্যালাইনের সঙ্গে মিশিয়ে বার্বিচুরেট গ্রুপের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। এতে মানসিক নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় কৌশল নষ্ট হয়ে যায়। ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশনের ফলে তাঁর আচ্ছন্নভাব আসে। অনেক ক্ষেত্রে কোনও আঘাত বা শক থেকে বা মানসিক সমস্যা থেকে রোগী মনোরোগ চিকিৎসকের সামনেও মুখ খুলছেন না। এমন হলে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় বিধি মেনে রোগীর সম্মতিতে তাঁর মনের কথা ও সমস্যা জানতে নারকো টেস্ট করতে পারেন।

নারকো কতটা নিখুঁত?
সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম রয়েছে নারকো টেস্ট যাঁর উপর হচ্ছে, তাঁর অনুমতি প্রয়োজন। এই পদ্ধতি খুবই প্রাচীন ও অতীত নানা অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, এটি খুব একটা ফলদায়ক নয়। একজন ব্যক্তি আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেই মনের কথা খুলে বলে দেবেন, এমনটা হয় না। পোড় খাওয়া অপরাধী শক্ত মনের হলে নারকো টেস্ট সফল নাও হতে পারে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen