বাসের গতিবিধি জানানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ! সহযাত্রী থেকে সম্পর্ক বন্ধুত্বে

বাসের টাইম টেবিল থেকে শুরু করে ‘জোকা থেকে বাস ছাড়লাম’ গোছের খবর নিয়মিত দিচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে গোটা গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৫৬ ছাড়িয়েছে।

April 1, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রাত ন’টা নাগাদ জোকা থেকে বারাসাতগামী বাস বাইপাস ধরে যাচ্ছে। খুব একটা ভিড় নেই। তবে বসার আসনও খালি ছিল না। মেট্রোপলিটন স্টপেজ ছাড়ার পর সামনের সিটে বসে থাকা এক যুবকের হঠাৎ প্রশ্ন, ‘কোন স্টপেজ আসছে ভাই?’ বুঝলাম, মোবাইলে সিনেমা দেখছেন, বাইরের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। উত্তর দিলাম, ‘চিংড়িঘাটা এল’। কয়েক সেকেন্ড পর মোবাইলে চোখ রেখেই ফের জিজ্ঞাসা, ‘কোথায় এল গো’? বললাম, ‘বেলেঘাটা ক্রসিং’। খেয়াল করলাম, নাম জানার সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে বাস স্টপের নাম লিখে পোস্ট করে দিচ্ছেন। কলেজ মোড় আসার পর বোঝা গেল অনবরত আপডেট দেওয়ার কারণ। বারাসত যাওয়ার জন্য বহু মানুষ দাঁড়িয়ে কলেজ মোড়ে। লহমায় বাস ভিড়ে ভিড়াক্কার। ওঠার পর বেশিরভাগ মানুষ আপডেট দিতে থাকা যুবককে ধন্যবাদ জানালেন। বোঝা গেল সিনেমা দেখার ফাঁকে অপেক্ষারত যাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাসের গতিবিধির খবরাখবর দিয়ে যাচ্ছিলেন যুবক। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, বারাসাত-জোকা রুটের সরকারি সি-৮ বাস যাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য তিনি। গ্রুপের নাম, ‘গোল্ডেন সি এইট গ্রুপ’।

উইপ্রো, কলেজ মোড়, টেকনোপলিস, রাজারহাট-নিউ টাউন, অ্যাক্সিস মল কিংবা উল্টোপথে মধ্যমগ্রাম, বিটি কলেজ, বিরাটি, এয়ারপোর্ট, হলদিরাম, সিটি সেন্টার ২-প্রতিদিন আপ এবং ডাউন রুটে সারাদিন নিয়ম করে যাত্রীরা দিয়ে চলেছেন বাসের গতিবিধির ‘আপডেট’। বাস কোথায় আছে, কতদূর আছে, ডিপো ছাড়ল কি না, সবটাই কেউ না কেউ জানান দিচ্ছেন এই গ্রুপে। রয়েছেন কয়েকটি বাসের চালক, কন্ডাক্টরও। বাসের টাইম টেবিল থেকে শুরু করে ‘জোকা থেকে বাস ছাড়লাম’ গোছের খবর নিয়মিত দিচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে গোটা গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৫৬ ছাড়িয়েছে।

বাসের গতিবিধি জানানোর পথ ধরে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে তা এখন বন্ধুত্বে এসে দাঁড়িয়েছে। সে বন্ধুত্ব বাসের মধ্যে মুড়ি ভাগ করে খাওয়া থেকে শীতের পিকনিক পর্যন্ত গড়িয়েছে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ কিংবা রং খেলার আসর, গ্রুপের বন্ধুদের ছাড়া এখন ভাবা যায় না। আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গেই সুখে, দুঃখে পাশে থাকার অভ্যাসও গড়ে উঠেছে স্বাভাবিক প্রবণতায়। কারও বাচ্চার অসুস্থতা হোক কিংবা পারিবারিক সমস্যা, গ্রুপের সদস্য থেকে বন্ধু হয়ে ওঠা শুভ্রদীপ, বাপি, রবীন, পাপ্পুরা সহ সকলেই সাহায্যের হাত বাড়ান। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা অচিরেই সেঞ্চুরি করবে বলে মনে করছেন সবাই। ‘সেদিন কি স্পেশাল সেলিব্রেশন হবে? যুবক বলেন, ‘গ্রুপ ফলো করুন। জানতে পারবেন।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen