বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে কে এই কাতারি তরুণ! বিশ্ব জুড়ে কৌতুহল
চিকিৎসক ভুলেই গিয়েছিলেন, মানুষ তার ইচ্ছাশক্তির সমান বড়। আর তাই চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরও কেটে গেছে আরও ৫ বছর।

রবিবার কাতার বিশ্বকাপের (FIFA World Cup Qatar 2022) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন জয় করেছেন এক কাতারি। মুহূর্তটা জাদুকরি, আবেগপ্রবণ, মনোমুগ্ধকর; স্মৃতিজাগানিয়াও—বিশ্বকাপ উদ্বোধনের মঞ্চে মরগান ফ্রিম্যান যখন উঠে দাঁড়ালেন আর গনিম আল মুফতাহ (Ghanim al Muftah) নিচ থেকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। হলিউড কিংবদন্তিও বাড়িয়ে দিলেন তাঁর বাঁ হাতটা, গনিমের তর্জনী ও ফ্রিম্যানের বাঁ হাতের মধ্যে সূক্ষ্ম ফাঁকা অংশটুকু মনে করিয়ে দিল সেই অমর চিত্রকর্ম, ‘দ্য ক্রিয়েশন অব অ্যাডাম’! সিস্টিন চ্যাপেলের সিলিংয়ে অমর চিত্রশিল্পী মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর আঁকা ফ্রেসকো, যেখানে সৃষ্টিকর্তা আদমকে জীবনদান করেন।
ফ্রিম্যানের সঙ্গে মঞ্চে দেখা যায় এই তরুণকে। যার শারীরিক উপস্থিতি আবার অন্য সবার মতো স্বাভাবিক কোনও মানুষের মতো নয়। শরীরের নিম্নাংশহীন ২০ বছর বয়সী এই তরুণ বিরল এক রোগ (কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম) নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা ওঠার পর এই তরুণকে নিয়েই সর্বত্র আলোচনা। সবার একই প্রশ্ন কে এই তরুণ?
গনিম আল মুফতাহ সেই ইতিহাসের এক চরিত্র, যে পৃথিবীর আলো দেখেছে শরীরের নিচের অংশ ছাড়াই।
সে সময় অনেকের পরামর্শ মেনে তাঁর মা গর্ভপাতের কঠিন সিদ্ধান্তটি নিলে এ চরিত্র আর দৃশ্য পৃথিবী দেখত না। কিন্তু মা তো মা-ই। সন্তান বিরল ‘কাডল রিগ্রেশন সিনড্রোম’-রোগে আক্রান্ত জেনেও একজন মা কীভাবে তার পৃথিবীতে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন!
মায়েরা তা পারেন না বলেই ২০০২ সালের ৫ মে তাই হলো যমজ সন্তানের—গনিম আল মুফতাহ ও আহমদ আল মুফতাহর। আহমদ সুস্থ থাকলেও গনিমের শরীরে নিচের অংশ ছিল না। ৬০ হাজার শিশুর মধ্যে প্রতি একজন এ রোগ নিয়ে জন্মায়, যে রোগে মেরুদণ্ডের নিচের অংশ বাড়ে না। গনিমের জন্মের সময় চিকিৎসক তাই বলেছিলেন, সে সর্বোচ্চ ১৫ বছর বাঁচতে পারে।
চিকিৎসক ভুলেই গিয়েছিলেন, মানুষ তার ইচ্ছাশক্তির সমান বড়। আর তাই চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরও কেটে গেছে আরও ৫ বছর।
কুড়ি বছর বয়সী গনিম এখন কাতারের কনিষ্ঠতম উদ্যোক্তা, মানবহিতৈষী, ইউটিউবার, টিক-টকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, মোটিভেশনাল স্পিকার, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকে তাঁর গল্প শুনে নিজেদের লড়াই লড়ার প্রেরণা পায়। ঠিক সিস্টিন চ্যাপেলের অ্যাঞ্জেলোর সেই ফ্রেসকো দেখে দর্শনার্থীদের অনেকে যেভাবে বুঝে নেন, জীবনটাই সবচেয়ে মূল্যবান, গনিমও তেমনি যেন সেই ছবির গভীরতম অনুভূতি থেকে উঠে আসা এক জীবন্ত চরিত্র!
২০০৯ সালে টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি লিডার্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক একজন আনসাং হিরো বা অদৃশ্যে থাকা বীরের স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০১৪ সালে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-সাবাহ তাকে নিযুক্ত করেন শান্তির দূত। কাতার ফিন্যানসিয়াল সেন্টার কর্তৃপক্ষের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন সম্মাননা পুরস্কার ও পদ লাভ করেছেন। গানিম এখন প্যারালিম্পিয়ান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।