SIR-র নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি কেন? ‘মানবিক মূল্য’ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল সাংসদ

December 10, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:৪০: সামনেই বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগেই ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR)-এর বাস্তবায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।

বুধবার একটি ব্লগে তিনি অভিযোগ করেন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকার বিরোধিতা কেউ করছে না, কিন্তু যে অপরিকল্পিত পদ্ধতিতে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, তা সাধারণ মানুষের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া এবং অনুপ্রবেশের অভিযোগ নিয়ে যখন রাজনৈতিক পারদ চড়ছে, তখন ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’Brien) তাঁর ব্লগে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।

১. বেছে বেছে কেন এই প্রক্রিয়া?

তৃণমূল নেতার প্রশ্ন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলা, অসম, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে নির্বাচন হতে চলেছে। এর মধ্যে তিনটি রাজ্যেই এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে। অথচ বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডে কেন এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে না? কেন্দ্রের কাছে এর উত্তর চেয়েছেন তিনি।

২. সীমান্তের দায় কার?

ভোটার তালিকায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম থাকা নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে, সে প্রসঙ্গে ডেরেক স্পষ্ট জানান, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফ (BSF), আইটিবিপি (ITBP), সিআরপিএফ (CRPF) এবং এসএসবি-র (SSB)। এই সমস্ত সংস্থাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। ডেরেকের প্রশ্ন, “সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ হলে তার দায় ও জবাবদিহি কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়?”

৩. ২০২৪ সালের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

ডেরেক ও’ব্রায়েন যুক্তি দেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে হয়েছিল, সেই তালিকাটিই এখন যাচাই করা হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, “হঠাৎ করে এই তালিকা রাতারাতি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেল কী করে? যদি এই তালিকা সত্যিই ভুল হয়, তবে এই ত্রুটিপূর্ণ তালিকায় নির্বাচিত বর্তমান লোকসভা কি ভেঙে দেওয়া উচিত নয়? কেন্দ্র কি তবে ফের নির্বাচনের ডাক দেবে?”

৪. মানবিক মূল্যের দায় কে নেবে?

এসআইআর প্রক্রিয়ার ‘মানবিক মূল্য’ (Human Cost) নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। ডেরেক অভিযোগ করেন, কাজের অমানবিক চাপে গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক বিএলও (BLO) বা ব্লক লেভেল অফিসার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, “রবিশস্যের মরসুমে চাষিদের ক্ষেত ছেড়ে দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। দিনমজুররা কাজ কামাই করে নথিপত্র জোগাড় করতে হন্যে হয়ে ছুটছেন। উন্নয়নের কাজ থমকে গেছে। এই চরম হয়রানির দায় কে নেবে?”

৫. ভাষাগত বৈষম্য ও প্রযুক্তিগত অস্বচ্ছতা

তৃণমূল নেতার অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে বহু মানুষকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি, ডুপ্লিকেট ভোটার চিহ্নিত করতে যে এআই (AI) অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই অ্যাপটি কে তৈরি করেছে, কবে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল বা এটি কোন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছে- সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA) নিয়োগের নিয়ম পরিবর্তন নিয়েও তিনি কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নির্বাচন কমিশন (Election Commission) একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং তাদের কাজ যে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হওয়া উচিত, তা মনে করিয়ে দিয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “প্রশ্ন করা বা উত্তর খোঁজা কখনওই দেশবিরোধী হতে পারে না। বাংলার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে যা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen