এবারেও কি নমো নমো করে দুর্গা পুজো কলকাতার ক্লাবগুলোর?

পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ছোট মাপের থিম-পুজো হবে।

August 10, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

আকাশে ইতিউতি ফিরোজা রঙের ছোঁয়া। যদিও খাস কলকাতার পুজোর ময়দানে উৎসবের গন্ধটুকুও নেই।
ছোট মাপের পুজোগুলি নীরব। বড় পুজোগুলিও প্রচার থেকে বহু দূরে। বহু পুজো কমিটির কর্তাই বলছেন, একে তো অতিমারিতে ভাঁড়ারের অবস্থা ভাল নয়। তাই খরচ বহুলাংশে কমাতে হয়েছে। সর্বোপরি করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত পুজো এখনও থিমই ঠিক করেনি! ওই পুজোর কর্তারা বলছেন, পুজোর বহর কমছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ছোট মাপের থিম-পুজো হবে।

কালীঘাটের ৬৬ পল্লির পুজোয় উপচে পড়ে ভিড়। কিন্তু অতিমারিতে খরচে রাশ টানছে তারাও। পুজো কমিটির কর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ২০১৮-১৯ সালে মোটামুটি ২০ লক্ষ টাকার বাজেট ছিল। গত বছর সেটা কমে হয় সাত লক্ষ টাকা। এ বার পাঁচ লক্ষের বাজেট করা হয়েছে। তাঁর মতে, পরিস্থিতি তো জাঁকজমক করে পুজোর মতো নয়। পাড়ার লোকেরা যাতে একটু মানসিক আনন্দ পান, সেটাই মূল লক্ষ্য।

হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোর খরচেও বিপুল রাশ টানা হচ্ছে। অতিমারির আগে তাদের গড় বাজেট হত ২৭-৩০ লক্ষ টাকা। গত বছর এক ধাক্কায় নেমে তা এসেছিল ১১ লক্ষে। পুজো কমিটির কর্তা শাশ্বত বসু জানাচ্ছেন, এ বার ১০ লক্ষ টাকার কমেই পুজো সারতে হবে। ওই চত্বরের কাশী বোস লেনের পুজোর খরচেও রাশ টানা হচ্ছে। সেখানকার পুজো কমিটির কর্তা সোমেন দত্ত বলেন, “পুজো ছোট করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পথচলতি মানুষ যাতে ভিড় এড়িয়ে পুজো দেখতে পারেন, তার জন্য জায়ান্ট স্ক্রিন করা হতে পারে।”

সোমেনবাবুদের পুজোয় ভোগের খ্যাতি শহরময়। কিন্তু এ বার তাঁরা ঠিক করেছেন, ভোগে রান্না করা খাবার দেবেন না। চাল, আনাজ, ডাল ঠাকুরকে নিবেদনের পরে প্যাকেটে ভরে পৌঁছে দেওয়া হবে গরিবদের কাছে। দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দিরের পুজোকর্তা পার্থ ঘোষ প্রতিমার বায়না দিয়েছেন। শিল্পীও তৈরি রেখেছেন। বলছেন, “পুজো তো হবেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে মণ্ডপের পরিকল্পনা করব।” টালা সরকার বাগানের পুজোকর্তা দেবজ্যোতি দে জানাচ্ছেন, গত বছরের মতো ছোট মাপের খোলামেলা মণ্ডপ এবং সাবেকি প্রতিমাতেই পুজো সারবেন তাঁরা।

অতিমারির দীর্ঘ উপস্থিতি প্রভাব ফেলেছে সার্বিক অর্থনীতিতে। তার প্রভাব পড়েছে পুজো কমিটির ভাঁড়ারেও। স্পনসরেরা আগের মতো দরাজ নন। পুজো সংক্রান্ত বিপণনে যুক্ত এক ব্যক্তি জানাচ্ছেন, স্পনসরেরা বিজ্ঞাপন দেন ভিড় অনুযায়ী। নতুন কোনও পণ্য বাজারে আনলে তার বিপণনে বেশি খরচ করেন। এ বার ভিড়ও নেই এবং অতিমারি পরিস্থিতিতে কোনও নতুন পণ্য সে-ভাবে বাজারে আসছে না। তাই বিজ্ঞাপন জগতে এখন ভাটা।

পুজোর ময়দানে কান পাতলে অবশ্য নানা ধরনের খবরও ভেসে আসছে। একদা পুজোর বাজেট উপচে গেলেও পরোয়া করতেন না পুজোকর্তারা। এমনকি, পরিবারের গয়না বন্ধক দিয়ে পুজোর খরচ জোগানোর বৃত্তান্তও আকছার শোনা যায়। কারণ তাঁরা জানতেন, ভিড় এবং পুরস্কারের দৌলতে স্পনসরের কাছ থেকে সেই টাকা উঠে আসবে। কিন্তু এখন তাঁরা ধরে নিয়েছেন, অতিমারির মন্দা সহজে দূর হবে না। তাই হাত উপুড় করে খরচের বদলে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে অনেক পুজো কমিটি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen