আবার বিপর্যয় হবে না তো? প্রবল জনরোষ উপেক্ষা করেই জাপানে চালু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু চুল্লি
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩০: ১৪ বছর আগের জাপানে (Japan) এখনও অক্ষত ফুকুশিমা বিপর্যয়ের দগদগে স্মৃতি। এবার প্রবল জনরোষ উপেক্ষা করে নিগাতার পরমাণু চুল্লি চালু করার সিদ্ধান্ত নিল জাপান সরকার (Japanese Government)। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদনের পর বিশ্বের বৃহত্তম কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় সচল হতে চলেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে এই কেন্দ্রের সাতটি চুল্লির মধ্যে একটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১১ সালের মার্চ মাসে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির জেরে ফুকুশিমার তিনটি পরমাণু চুল্লি (Nuclear reactor) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চের্নোবিলের পর এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিপর্যয়। তেজস্ক্রিয়তার ভয়ে সেই সময় দেশের ৫৪টি পরমাণু চুল্লিই বন্ধ করে দেয় জাপান সরকার। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছর পর জ্বালানি সংকট মেটাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সরকার ফের পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে চাইছে। মাস দুয়েক আগে প্রাক্তন মন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হন এবং সম্প্রতি নিগাতা প্রশাসন তাতে সিলমোহর দেয়।
তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে নিগাতার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। গত অক্টোবরে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিগাতার অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ চান না সেখানে পরমাণু চুল্লি চালু হোক। প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনাকারী সংস্থা ‘টোকিও ইলেক্ট্রনিক পাওয়ার কোম্পানি’ (টেপকো)-র ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করেই চুল্লিটি চালু করা হচ্ছে, যা বড়সড় বিপদের কারণ হতে পারে।
ফুকুশিমার সেই ভয়াবহতা নিজের চোখে দেখেছিলেন ৫২ বছর বয়সী আয়াকো ওগা। বিপর্যয়ের পর ফুকুশিমা ছেড়ে তিনি সপরিবার আশ্রয় নিয়েছিলেন নিগাতায়। কিন্তু সেখানেও পরমাণু চুল্লি চালুর খবরে তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আয়াকো বলেন, পরমাণু চুল্লিতে বিপর্যয় হলে কী ঘটতে পারে, তা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। তাই তারা চান না সেখানে আর পরমাণু চুল্লি চালু হোক। ফুকুশিমার ভূত এখনও তাদের তাড়া করে বেড়ায়।
যদিও টেপকো দাবি করেছে, ফুকুশিমার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। সুনামির জল আটকাতে নতুন সমুদ্রপ্রাচীর, অত্যাধুনিক জলনিরোধক দরজা এবং তেজস্ক্রিয়তা রোধে উন্নত ছাঁকনি ব্যবস্থা বসানো হয়েছে। গত অক্টোবরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনের পরই চুল্লিটি চালুর সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সংস্থার।
ফুকুশিমার ঘটনার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে জাপান সরকারকে। সেই আর্থিক চাপ কমাতে এবং দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতেই ফের কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া কেন্দ্রটি সচল করার এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।