X = Prem – ভালোবাসার সাতকাহনে বিজ্ঞানের আলো-আঁধারি

X = Prem প্রেমের কাহিনী। খিলাত আর জয়ীর প্রেম। অর্ণবের না পাওয়া ভালোবাসার গল্প

June 5, 2022 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

অগ্নিভ নিয়োগী

ছবি সৌজন্যেঃ SVF

কথায় বলে, স্মৃতি সতত সুখের। কিন্তু কোনও কারণে যদি এই সুখস্মৃতি আপনার সঙ্গ ত্যাগ করে, তাহলে জীবনটা কেমন পানসে হয়ে যায় তাই না? যেন প্রজাপতির পাখনার রঙগুলো কেউ মুছে দিয়েছে। ইস্টম্যান কালারের ছবি হঠাৎ করেই হয়ে গেছে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। তাই কি X = Prem ছবিটি সাদা-কালো ক্যানভাসে বানালেন? উত্তরটা হয়তো পরিচালকই দিতে পারবেন।

X = Prem প্রেমের কাহিনী। খিলাত আর জয়ীর প্রেম। অর্ণবের না পাওয়া ভালোবাসার আখ্যান। আর নিজের সংসারে বসত করা উহ্য সতীনের সাথে মানিয়ে নেওয়া অদিতির গল্প। আজি হতে শতবর্ষ আগে কবি প্রশ্ন করে গেছেন, ভালোবাসা কারে কয়। সৃজিত তাঁর ছবিতে একধাপ এগিয়ে দেখিয়েছেন, ভালোবাসা কয় প্রকারের হয়।

X Prem ছবির দৃশ্য। সৌজন্যেঃ SVF

এক দুর্ঘটনায় গত ১০ বছরের স্মৃতি হারিয়ে ফেলে খিলাত। সে মনে করতে পারে না তাঁর কলেজের দিনগুলো, জয়ীর সাথে প্রেমে পড়ার মুহূর্তের কথা, কিংবা জয়ীকে ভালোবাসার অনুভূতি। স্মৃতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সেই সোনালি বিকেলগুলো ফিরে পেতে চায় সে। কিন্তু তাঁর প্রয়োজন এমন কারও স্মৃতি যে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছিল তাঁরই স্ত্রীকে, অর্থাৎ জয়ীর গোপন কোনও প্রেমিক। এদিকে, আজও জয়ীকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি অর্ণব। খিলাতের সুপ্ত-প্রেম কি জাগিয়ে তুলতে পারবে অর্ণবের বিষণ্ণ কবিতারা? জানতে হলে দেখতে হবে এই ছবি।

আদপে, স্মৃতির এই মায়াখেলার বাইরে গিয়ে পরিচালক সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছেন একটুকরো যৌবন। কলেজের ফেলে আসা দিনগুলো, খুনসুটি, ঝগড়াঝাটি, আড্ডা, প্রথম সুখটানের অভিজ্ঞতা, কলেজ ফেস্টে উদ্দাম উচ্ছাস, ক্লাস কেটে ময়দানে বৃষ্টিতে ভেজা। মনে পড়ে যাবে প্রথম সবকিছু – প্রথম হাতে হাত রাখা, চোখে চোখ রাখা, কাঁধ মাথা রেখে কাঁদতে পারা কিংবা ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বিপ্লবের স্বাদ পাওয়া। আর এই স্মৃতির সাগরে ডুব দিতে সঙ্গত দেয় সানাইয়ের গানগুলি।

X Prem ছবির দৃশ্য। সৌজন্যেঃ SVF

সত্যি এই শহরজুড়ে ভালোবাসার মরশুম। শ্রেয়া ঘোষাল আর অরিজিৎ সিংহের কণ্ঠে পুরোনো প্রেমের স্মৃতিতে মশগুল সকলেই। বারিষের লেখা লাইন ফিরছে মুখে মুখে। সাহানা আর সমন্তকের এভারগ্রীন ডুয়েট বায়নাবিলাসীও মনকে করে তোলে আনচান, ইচ্ছে করে ছুটে যাই সেই বিশেষ কারও কাছে, মেলা থেকে নিরালা বাঁশি কিনে দিতে বলি তাঁকে। অন্যদিকে সিন্ডারেলা মন কিংবা রোদের নিশানায় পাওয়া যায় অদ্ভুত প্রশান্তি। প্রত্যেকটা গান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পর্দায়।

গানের পাশাপাশি, ছবিকে আকর্ষণীয় করে তোলে চিত্রগ্রহণ। সৃজিত-সুলভ ড্রোন শট তো আছেই, পাশাপাশি সাদাকালোর মায়াজালে অভিনেতাদের মুখভঙ্গি ধরা পড়ে অনাবিল আদলে। আর সৃজিতোচিত সংলাপও রয়েছে ছবি জুড়ে। বিশেষ করে খিলাতের জয়ীকে প্রপোজ করার দৃশ্যে তাঁর লেখা কবিতা ইতিমধ্যেই মন জয় করেছে সাধারণ মানুষের।

অভিনয়ের প্রসঙ্গে অবশ্যই প্রথমেই প্রশংসার দাবিদার অর্জুন চক্রবর্তী। না-পাওয়া ভালোবাসার স্মৃতিতে ডুবে থাকা অর্ণবের চরিত্রে নিজের সবটা উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। হাততালির যোগ্য শ্রুতি দাসও। কিছু কিছু দৃশ্যে তাঁর চোখের ভাষা বুক চিরে দেয়। যে দৃশ্যে জয়ীকে চিনতে পারে না হাসপাতালে শয্যাশায়ী খিলাত, শ্রুতির অভিনয় মুগ্ধ করে মনকে। অনিন্দ্য সেনগুপ্তও স্মৃতিভ্রষ্ট খিলাতের যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছেন যত্ন করে। ছোট পরিসরে অভিনয়গুণে মুগ্ধ করেছেন মধুরিমাও।

X Prem ছবির দৃশ্য। সৌজন্যেঃ SVF

কিন্তু শুধুই কি নিখাদ প্রেমের গল্প বললেন সৃজিত? যে মানুষটা আমাদের বাইশে শ্রাবণ বা অটোগ্রাফের মত থ্রিলার উপহার দিয়েছেন, তাঁর প্রেমের গল্পতেও যে থাকবে চমকের ছোঁয়া, তা বলাই বাহুল্য। তাই তো Eternal Sunshine of a Spotless Mind কে ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’ জানিয়ে স্মৃতি প্রতিস্থাপনের মত সায়েন্স ফিকশন উপাদান এই ছবিকে করে তোলে আরও চিত্তাকর্ষক। আর মোপাসাঁর গল্পের মত শেষে অমোঘ টুইস্ট।

সত্যি বলতে, বাংলায় সায়েন্স ফিকশন নিয়ে ছবি খুব কমই হয়েছে। পাতালঘরের কথা মনে পড়ে। গতবছর তৈরি হয়েছিল বনি। কিন্তু সেগুলো সবই থ্রিলার। X = Prem এর মাধ্যমে ভালোবাসার সাথে মিশেল ঘটল বিজ্ঞানের। যা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে অনন্য। অতিমারী উত্তর পর্বে যখন দর্শককে হলমুখী করতে বেশিরভাগ নির্মাতা থোড় বড়ি খাড়ার পথে হাঁটছে, তখন সৃজিত যে খাড়া বড়ি থোড়ে না গিয়ে ভিন্ন স্বাদের ছবি বানালেন, তা বাহবাযোগ্য।

X Prem ছবির দৃশ্য। সৌজন্যেঃ SVF

পুরানো সেই দিনের কথাগুলো ভরা থাকে স্মৃতিসুধায়। জীবনের পথচলায় নতুন করে তৈরি হবে আরও অনেক মুহূর্ত। অতীতের মূর্ছনায় মিশে যাক বর্তমানের রাগগুলি। X = প্রেম দেখে হল থেকে বেরোতে বেরোতে মনে আসে এই কথাগুলিই।

বিঃ দ্রঃ আমি প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। প্রেম আমাদের কলেজের তিন P এর অন্যতম। আর ঘটনাচক্রে, আমি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সামার ইন্টার্নশিপ করেছিলাম। বিষয় ছিল ঘুম আর স্মৃতির যোগসাজশ। তাই, ছবির শুরুতেই আমার দুই প্রিয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি উৎসর্গিত ঘোষণাপত্র মন ভালো করে দেয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen