গ্রাম জুড়ে সংসার ‘দিদিমণি’র

December 1, 2019 | 2 min read

Authored By:

Drishti Bhongi Drishti Bhongi
Published by: Drishti Bhongi

আউশগ্রামেরই সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া অনেকে ঋতুকালীন সমস্যা, স্ত্রী রোগের কথা কাউকে বলতে পারছিল না। দিদিমণি তাদের কাউন্সিলর, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এখন তারা সুস্থ।

এমন হাজার খানেক ঘটনা রয়েছে ‘দিদিমণি’, আউশগ্রাম ১ ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার সোমা তিওয়ারির জীবনে। কাজের সূত্রে নানা গ্রামে যান তিনি। যেখানেই যান সেখানকার বাসিন্দাদের আত্মীয় হয়ে ওঠেন। কাজের পরিধির বাইরে গিয়েও সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। শিশুদের পড়ানো, চিকিৎসার ব্যবস্থা, জামাকাপড়-খাবার দেওয়া থেকে নারী পাচার, নাবালিকা বিয়ে, বধূ নির্যাতন রোখা এমনকি সাপে কাটলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বা কুসংস্কারের বিরোধী প্রচারেও সবার আগে এগিয়ে আসেন বছর পঞ্চান্নর ওই মহিলা। আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসুও বলেন, ‘‘দায়িত্ববোধের জন্যই ওঁকে ভরসা করা যায়। বিভিন্ন সামাজিক কাজে উনি সত্যিই প্রশাসনের কাণ্ডারী।’’ 

পুরুলিয়া শহরের মেয়ে সোমাদেবী কলেজে পড়ার সময় থেকেই সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত। পরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের নিতুড়িয়া ব্লক থেকে কর্মজীবন শুরু তাঁর। গ্রামে ঘুরে কারও রেশন কার্ড, কারও স্কুলে ভর্তির আবেদন করে দেওয়া থেকে প্রেসক্রিপশন বুঝিয়ে দেওয়া, সবেই ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি। পরে বীরভূমের রামপুরহাটে বদলি হয়ে যান। সেখানেও চকমণ্ডলা, ধাতালপারা, মুর্গাডাঙার মতো বিভিন্ন জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় কাজ করেন তিনি। মেয়েদের স্বাবলম্বী করতে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির উপরেও জোর দেন। এমনকি, নিজের কাজের শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাঁদের সঙ্গে বসে পরামর্শ দেওয়া, কী ভাবে খাতা লিখতে হয় তা দেখিয়েও দিতেন তিনি। ২০১১ সালে আসেন আউশগ্রাম ব্লকে। ব্লকের আবাসনে থাকাকালীন এলাকার দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানো, জামাকাপড়, বইপত্র কিনে দেওয়া শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজনের উচ্চশিক্ষার দায়িত্বও তুলে নিয়েছেন কাঁধে। এ ছাড়াও প্রশাসনের সাহায্যে স্কুলছুট কমানো, নারী পাচার, বধূ নির্যাতন, নাবালিকা বিয়ে রোখা, সাপে কামড়ানো, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ, বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের স্বাস্থ্যবিধান-সহ শৌচাগার তৈরি ও ব্যবহারের মতো সামাজিক সচেতনতার বার্তা দেওয়াও তাঁর নিত্য নৈমিত্তিক কাজ।

বনপাড়ার মনি হেমব্রম, যাদবগঞ্জ মাদারতলার বাসিন্দা লক্ষ্মী টুডুরা বলেন, ‘‘ছুটির দিনেও একই ভাবে কাজ করেন দিদিমণি। আমাদের ছেলেমেয়ের অসুখে যে বাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজের লোকও করে না।’’ সোমাদেবীর সহকর্মী স্বপন বাগদি, ময়ূখ রহমানেরা জানান, বাঁ চোখে প্রায় দেখতে পান না তিনি। বার পাঁচেক অস্ত্রোপচার হয়েছে ওই চোখে। স্নায়ুরোগও রয়েছে। তার পরেও ছোটাছুটি দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই। সোমাদেবী বলেন, ‘‘বাবা চিকিৎসক ছিলেন। ছোট থেকে তাঁর কাজকর্ম দেখে অণুপ্রেরণা পেয়েছি। এখন স্বামী, কাজের জায়গা থেকে সাহায্য পাই। যা করি মনের তাগিদ থেকেই।’’ স্বামী সানু মল্লিকও যতটা পারেন স্ত্রীকে সাহায্য করেন। 

দু’জনের সংসারে কবে যে গ্রামের সবাই ঢুকে গিয়েছেন, আলাদা করতে পারেন না তাঁরাও।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ফলো করুন :

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen