১৫০ বছর আগে প্রথম পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন
আজকের যুগে বিভিন্ন ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের ভিড়েও প্রবলভাবে টিকে আছে খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন। প্রায় দেড়শো বছর আগে বাংলা খবরের কাগজে যখন প্রথম পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন বেরোয়, প্রায় মার মার করে তেড়ে এসেছিল বঙ্গসমাজ।
১৮৭১ সালের ১১ জুলাই। তৎকালীন বাংলার একটি সংবাদপত্র ‘এক্সচেঞ্জ গেজেট’-এ বেরোল একটি বিশেষ বিজ্ঞাপন। ‘বিবাহ’ শিরোনামের ওই বিজ্ঞাপনটি ছিল এইরকম—
‘একজন কর্মচারী যিনি ২০ বৎসর কর্মকার্য করিয়াছেন, এখন তাঁহার বিবাহ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে তিনি এমন একটি কনে চান যাহার বয়স ২৫ বৎসরের অধিক নহে এবং সংসারের কাজকর্মে বিশেষ নিপুণ। টাকাকড়ির প্রয়োজন নাই। বর বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে আছেন। কনেরা দরখাস্তের সঙ্গে যেন নিজ নিজ চেহারার ছবি পাঠাইয়া দেন। যাঁহার চেহারা পছন্দ না হইবে তাঁহার চেহারা [ছবি] ফিরাইয়া দেওয়া যাইবেক। কনেরা ও কে নামে শিরোনাম দিয়া, এক্সচেঞ্জ গেজেট ছাপখানায় অধ্যক্ষের নিকট দরখাস্ত পাঠাইয়া দিবেন।’
আজকের পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনের নিরিখে দেখলে তেমন কিছুই অস্বাভাবিক না। কিন্তু সেই সময় এটি দেখে রীতিমত শোরগোল পড়ে গেল। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে যে বিয়ে করা যায়, এমন ঘটনায় রক্ষণশীল সমাজও রেগে উঠল। বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় অন্যান্য কাগজের সম্পাদকদের কাছ থেকেও। ‘সুলভ সমাচার’ পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়— ‘খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়া লোকে তো ঘর বাড়ি গাড়ি ঘোড়াই কিনিয়া থাকে কিন্তু বিজ্ঞাপন দ্বারা কিরূপে বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইতে পারে… এমন বিবাহের চেয়ে আইবুড়ো থাকা ভাল…’।
সাহেবি শিক্ষা এবং ইংরেজি শিক্ষাকেও কাঠগড়ায় তোলে তখনকার বঙ্গ সমাজ। এই পদ্ধতিতে বিবাহ করে যে ‘সংসারে সুখ পাওয়া যায় না’, সে কথাও ফলাও করে বলা হয়। কিন্তু পাশাপাশি, ১৮৭১ সালের এই বিজ্ঞাপন তখনকার প্রচলিত অনেক ধারণাকেই ভেঙে দিয়েছিল। তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মানেনি এই ঘটনা।
পরবর্তীকালে এই ‘পাত্র-পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপনই খবরের কাগজের অন্যতম প্রধান অংশ হয়ে উঠেছে।