খেলা বিভাগে ফিরে যান

মোহনবাগানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়

January 20, 2020 | 3 min read

অবশেষে এঁতিহাবাহী মোহনবাগানের সঙ্গে মিশে গেল আরপিএসজি গ্রুপ। অর্থাৎ সবুজ-মেরুনের সঙ্গী হল এটিকে। সচিব টুটু বোসের প্রতিশ্রুতিও পূরণ হল। আগামী বছর থেকে মোহনবাগান নেমে পড়ছে আইএসএল খেলতে। এমন সময়ে সংযুক্তিকরণ হল যেখানে দু’টি দল দেশের সর্বোচ্চ লিগের শীর্ষে রয়েছে। একদিকে মোহনবাগান যেমন আই লিগের শীর্ষে । অন্যদিকে আইএসএল-এর চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে রয়েছে এটিকে । ভারতীয় ফুটবল এমন ঘটনার সাক্ষী কখনও অতীতে থাকেনি । শুধু ভারতে কেন, বিশ্বে ঘটেছে কি না সন্দেহ।

ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বসলেও আরপিএসজি গ্রুপের কর্ণধার ব্যক্তিগতভাবে চাননি লাল-হলুদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধতে । তাই নিজেই তিনি একসময় সরে আসেন। ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হয়ে থাকাই বরাবর পছন্দ করে এসেছে আরপিএসজি প্রপ। তাই অতীতে যেমন ১৫০ বছরের স্পেনসার্সের মতো খুচরো বিক্রেতার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, পাশাপাশি একশো বছরের সারেগামার সঙ্গে এগিয়েছে । ১২০ বছরের সিইএসসি-র কর্ণধার আরপি গোয়েঙ্কা ছিলেন মোহনবাগানের সদস্য। একসময় মোহনবাগান মাঠে খেলাও দেখতে এসেছিলেন তিনি। তাই ১৩০ বছরের ঐতিহাসিক ক্লাবের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে চলতে চেয়েছিলেন তিনি।

মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে এটিকের চুক্তি অনুযায়ী ৮০ শতাংশ শেয়ার পাবে নতুন কোম্পানি। বর্তমান ক্লাবের ফুটবল কোম্পানির পুরো শেয়ার সদস্যদের হাতে চলে গিয়েছে । যা আগে ছিল না। বিশ্বব্যাপী বড় বড় ফুটবল দল কোম্পানির দ্বারা নিয়স্ত্রিত হয়। মোহনবাগানে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অতীতে যেমন ছিল ভবিষ্যতেও তাই হবে। তবে এই চুক্তি কার্যকর হবে ২০২০ জুন মাস থেকে। 

অর্থাৎ আগামী বছর ঘরোয়া লিগ থেকে শুরু করে আইএসএল সবই খেলা হবে এটিকে-মোহনবাগানের ছাতার তলায়। তার জন্য মোহনবাগানের ঐতিহ্য সবুজ-মেরুন জার্সি অটুট থাকবে৷ সদস্যরাও বঞ্চিত হবেন না। অর্থাৎ ক্লাব সদস্যরা এখন যেমন খেলা দেখা থেকে শুরু করে যাবতীয় সুযোগ- সুবিধে পেয়ে আসছেন, সেইভাবে পাবেন। শুধু তাই নয়, মাঠ থেকে শুরু ব্যবহার করবে নতুন সংস্থা । ক্লাবের অন্যান্য খেলা অর্থাৎ ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স সব থাকবে বর্তমান কমিটির হাতেই। মে মাস পর্যন্ত মোহনবাগানের যাবতীয় খরচ যথারীতি জোগাবেন টুটু বোস। আরও ঠিক হয়েছে, এবারের ফর্মে থাকা ফুটবলাররা  আগামীবার দলগঠনের সময় যথারীতি প্রাধান্য পাবেন।

এই বিষয়ে অনেক বিশিষ্ট ক্রীড়াবীদের মতামত দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকেঃ-

জোস রামিরেজ ব্যারেটোঃ জানি না চুক্তিতে কি আছে। তবে ক্লাব চালানোর জন্য প্রচুর অর্থ চাই। তার জন্য ইনভেস্টর প্রয়োজন। আশা করব, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং মোহনবাগান কর্তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ভালর জন্যই।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ বাংলা ফুটবলে একটা অবিস্মরণীয় জুটি তৈরী হল। আমার কোনও সন্দেহ নেই এটিকে ও মোহনবাগান জুটি ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবে।

বাইচুং ভুটিয়াঃ যা সারা পৃথিবীতে হচ্ছে, সেটাই এবার ভারতে হচ্ছে। এটিকের সঙ্গে মোহনবাগান যুক্ত হওয়ার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। বরং ফুটবলে আধুনিক হতে গেলে বড় কোম্পানির সঙ্গে এরকম সংযুক্তিকরণ ছাড়া কোনও উপায় নেই। দেখুন না লিভারপুলকে নিয়েছে ফেন ওয়ে স্পোর্টস গ্র্প। বার্সেলোনাকে রাকুতেন। এগুলি স্বাভাবিক ঘটনা। যেবার আমি এটিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তখনই সঞ্জীব গোয়েছ্ধাকে অনুরোধ করেছিলাম মোহনবাগানের মত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে। সঞ্জীব গোয়েক্কা যেরকম সফল ব্যবসায়ী, মোহনবাগান সেরকম ইতিহাসসমৃদ্ধ ক্লাব। মোহনবাগান একদম ঠিকঠাক মানুষকেই বেছেছেন।

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ মোহনবাগানের জন্য আজ একই সঙ্গে ঐতিহাসিক এবং গর্বের দিন। ক্লাব চালাতে গেলে এখন দরকার কোটি কোটি টাকা। আর তার জন্য দরকার শিল্পপতি। আরপিজির সঙ্গে মোহনবাগানের যুক্ত হওয়া অসাধারণ সিদ্ধান্ত। মাথায় রাখতে হবে, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা কলকাতারই মানুষ৷ তিনি ভালভাবেই জানেন। তাঁর মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় খুবই ভাল হল।

শ্যাম থাপাঃ মোহনবাগান এটিকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আমি খুবই খুশি। এটা অনেক আগে হলেই ভাল হত। অস্বীকার করে লাভ নেই, এখন আইএসএলটাই দেশের এক নম্বর লিগ্। সেখানে মোহনবাগান- ইস্টবেঙ্গল খেলছে না,ভাবতেই পারছি না। আমাদের প্রজন্মে আটকে থাকলে হবে না। এখনকার প্রজন্ম আইএসএল বোঝে । সেখানে সেরা সেরা ফুটবলাররা খেলছে। আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল অর্থের অভাবে খেলছে দ্বিতীয় সারির প্রতিযোগিতায় । এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।

সুভাষ ভৌমিকঃ এটিকের সঙ্গে মোহনবাগান যুক্ত হওয়ায় আমি অন্তত খুশি। টুটু বস প্রতি বছর পকেত থেকে টাকা দিয়ে ক্লাব চালাবেন, এরকমটা হয় নাকি? সারা পৃথিবীর ফুটবলটাই তো এভাবে চলছে। ইতিহাস আর আবেগে জড়িয়ে থাকলে হবে না। আগেও তো ইউবির সঙ্গে ছিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#মোহনবাগান, #এটিকে, #আইএসএল

আরো দেখুন