ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

চেনা পুরুলিয়ার মনকাড়া অল্পচেনা গন্তব্যে

January 20, 2020 | 3 min read

সারা বছরে নানা ঋতুতে পুরুলিয়ার ভিন্ন রূপ দেখা যায়। রুক্ষতার মাঝেও অনন্ত রঙিন রাঢ় বাংলার রূপ অতুলনীয়। রাত ১১টা ৫ মিনিটের আদ্রা-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে চেপে বরাভূম কিংবা ধর্মতলা থেকে ছেড়ে যাওয়া নাইট কুইনে সওয়ারি হয়ে দুয়ারসিনির মোড়ে নেমে টেন্টবাসী হওয়া যায় কুকুবুরু পাহাড়ের কোলে। হোটেল বা হোমস্টে থাকলেও প্রকৃতির কোলে থাকাটা অনেকের পছন্দের। গাছবাড়ির টঙেও দিন কাটানো যায়।

অযোধ্যা ও বাঘমুন্ডির জলের আধার খয়েরাবেড়া ড্যাম। ছবি সৌজন্যেঃ anandabaza

পাহাড় দেবতার মেলায়

শীত জুড়ে আদিবাসী সমাজ নানান উৎসবে মেতে ওঠে, পুরুলিয়ার পাহাড় বা টাঁড় (পাহাড়) হলেন দেবতা। পুজোর তাগিদে রাঢ় বাংলার মানুষ পাহাড়ে চড়েন। আদিবাসীদের মঙ্গলকামনায়, সংসারে সুখশান্তি, সাচ্ছন্দ্যের কামনায় প্রবল শীত উপেক্ষা করে পুরোহিত চড়েন পাহাড়ের শিখরে। সঙ্গে চলেন বেশ কিছু অনুগামী। হাতে সফেদ মোরগ। সেই মোরগের গলা চিরে রক্ত ছড়িয়ে দেন পাথরের থানে। তারপর একটা পতাকা উড়িয়ে দেন অযোধ্যা পাহাড়ের শীর্ষে। 

সারাটা দিন ধরে চলে বুরু ঠাকুরের পুজো। পাহাড়ের নীচে চলে মেলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক হলেও মেলার চরিত্রের অদলবদল হয়নি। মেলা জুড়ে নানান বৈচিত্র্য চোখে পড়বে। নানান উজ্জ্বল বর্ণের জামাকাপড় পরে গ্রামের মেয়েরা ভিড় জমান। 

চুলের ফিতে,দস্তার অলঙ্কার, শীতের জামাকাপড়, পাথুরে বাসন, চুল্লিতে তপ্ত জিলিপি, গজা, খাজা, জিলিপি, মুখোশ থেকে কোয়াক ডাক্তারের অস্থায়ী চেম্বার, প্রেমে সফলের বটিকা, তীব্র বশীকরণ মাদুলি,মোরগ লড়াই, কাঠের ঘোড়ার ঘূর্ণিতে দুরন্ত পাক খাওয়া কচিকাচাদের চিৎকার, শালের পাতায় আলুর বড়া-মুড়ি-ঘুঘনি আর কোথাও জাদুকরের জাদু। সব মিলিয়ে এক অন্য ভুবন। সে দিন সারা দিন কেউ বাড়িতে থাকেন না। সব্বাই মাঠে আর মেলায় মেলায় ঘুরে বেড়ান।

পুরুলিয়ার ছৌ নাচের একটি দৃশ্য। ছবি সৌজন্যেঃ Youtube

কোথাও ঝুমুর, কোথাও ছৌ

সোনকুপি, ভচুংডি, দুয়ারসিনি সমেত পুরুলিয়ার নানান গ্রামে ম্যারাপ বা বাঁশের বেড়ার ঘেরাটোপে সন্ধে নামতেই ঝুমুর গানের আসর বসে। বিখ্যাত শিল্পী নয়, গ্রামের সাধারণ পুরুষ-মহিলারা এই গানে অংশগ্রহণ করেন। বহু বছর ধরে এই গানের ধারা চলে আসছে।

বাঘমুন্ডির চড়িদা হল প্রবাদপ্রতিম ছৌ শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়ার গ্রাম। এখানকার মুখোশ গ্রামের খ্যাতি জগৎজোড়া। কথিত আছে, গম্ভীর সিংহ তখন নিতান্ত বালক। বাবা জিপা সিংহ মুড়ার কঠিন প্রশিক্ষণের মুখে পড়তে হয়েছিল। পাহাড়ের হাতায় ক্ষেপা ষাঁড়ের সামনে অন্তত কুড়িটি করে জাম্প দিতে হত। তার সেই অধ্যবসায় আর কঠিন অনুশীলন তাঁকে খ্যাতির চুড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। আজও অনেকেই ছৌ নাচের প্রশিক্ষণ নেন। 

বামনি ঝোরার সৌন্দর্য্য। ছবি সৌওজন্যেঃ youtube

ঝর্না আর লেকের পাড়ে

পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু ঝর্না। সাত-সকালেই বেরিয়ে পড়লাম। আপার ড্যাম পেরিয়ে এক সুন্দর গন্তব্য। কোনও পাকা রাস্তা নেই। আঁকাবাঁকা, সংকীর্ণ পথ পেরিয়ে অনেকটা নীচে নামতেই এক সুন্দর ঝর্না। বামনি ঝোরা। আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন ভুলিয়ে দেয়। বামনি থেকে মেরেকেটে দেড় কিমি দূরে আরও এক ঝর্না। তবে বামনি ঝোরার মতো অতটা নামতে হয় না। পাথরের খাঁজ বেয়ে নেমে আসছে তুরগা ঝর্না।

চারদিকে অনুচ্চ টাঁড় আর তার মাঝ বরাবর সরু রাস্তা পেরিয়ে চলে আসতেই দেখা মিলবে বিশাল পাথরের চাতাল বেয়ে বয়ে আসা আরও এক ঝর্নার, ঘাঘকোঁচা। গাঁদারঙা রোদে, গায়ে হলুদ দুপুরে লালমাটির প্রকৃতি উদার-উদাস। মাটিলেপা কাঁচাঘর, বাঁশবেড়া, খাপরা ছাদ, কুসুমগাছ, পলাশবন পেরিয়ে অযোধ্যা ও বাঘমুন্ডির জলের আধার খয়েরাবেড়া ড্যাম। এখানেই তুরগা লেক। আকাশপানের অসীম নীল হ্রদের হৃদয়ে। যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ীর দল সাঁতার কাটে অবলীলায়।

প্রয়োজনীয় তথ্য: কলকাতা থেকে পুরুলিয়া আসার অনেক ট্রেন আছে। সবচেয়ে ভাল ৫৮০১১ আদ্রা-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে বরাভূম স্টেশনে নেমে গাড়িতে। উল্লিখিত নানান স্পট দেখে নিন।

নতুন টাঁড়ের টঙ ক্যাম্পে থাকার জন্য রয়েছে ২০টি বিদেশি টেন্ট। তিনটি গাছবাড়ি। টেন্ট ভাড়া ২২০০ টাকা ও গাছবাড়িতে ৩২০০ টাকা। খাওয়া প্রতিদিন জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যোগাযোগ: ৯২৩১৫৮১১৭৭ / ৬২৮৯৩৮২২৭৭

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Purulia Unknown Places

আরো দেখুন