নারী ক্ষমতায়নে নক্সি কাঁথা – পথ দেখালেন আইরিন
আমরা অনেক সময়েই অনেক শহুরে মহিলা শিল্পপতিদের গল্প শুনে থাকি। কিভাবে তারা নিজেদের ব্যাবসাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গেছেন তা নিয়ে তাদের বক্তৃতা শুনেও শিহরীত হই। কিন্তু আজ শুনব এক অন্যরকম গল্প। এক প্রত্যন্ত গ্রামের, দরীদ্র পরিবারের এক মহিলার স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা এবং অন্য মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার গল্প।
আইরিন বেগম বাংলাদেশের একজন সফল ব্যাবসায়ী। নিজের সাথে সাথেই তিনি সীমানা ঘেঁষা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের প্রায় কুড়ি হাজার মহিলাকে স্বাবলম্বী করে তাদের জীবন বদলে দিয়েছেন, তাদের নক্সি কাঁথার কাজ শিখিয়ে।
দারিদ্রের তাড়নায় খুব অল্প বয়সে আইরিনকে পড়াশোনা ছাড়তে হয়। স্কুলের গণ্ডি পেরনো হয়নি তার। কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্য তার বরাবরই ছিল। আর তার এই লক্ষ্যে তার পাশে ছিলেন স্বামী আব্দুল মান্নান। বর্তমানে নবাবগঞ্জের কালিনগরের বাসিন্দা আইরীন, নক্সি কাঁথা শিল্পের এক নতুন ইতিহাস রচনা করে চলেছেন। গড়ে তুলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বড় নক্সি কাঁথা উৎপাদন এবং বিক্রয় কেন্দ্র।
১৯৯৭-৯৮ আইরিন তিনটি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে লোকাল কমিটি মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। তখনই তিনি ঠিক করেন নারী ক্ষমতায়নের জন্যে কিছু করতে হবে। এমন কিছু যা একই সাথে পুরনো ঐতিহ্যকেও বাঁচিয়ে রাখবে। স্বামীর সমর্থনে সেই লক্ষ্যেই তিনি নক্সি কাঁথার কাজ শুরু করেন।
২০০২ সালে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে মাত্র ৮০ জন মহিলাকে নিয়ে শুরু করেন ব্যাবসা। ২০১৪ সালের মধ্যেই তার অধীনে কর্মরতার সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার। শুধু মহিলাদের সাহায্যই নয়, তার এই উদ্যোগ ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশের বহু হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে।
প্রতিমাসে ৫৫ লক্ষ টাকার কাপড় এবং প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার টাকার সুতো কেনা হয় কাঁথার চাহিদা মেটাতে। সব মিলিয়ে এর থেকে একদিনের আয় প্রায় এক লক্ষ টাকা। এর জন্যে বিভিন্ন গ্রামের মহিলাদের থেকে কাপড়, সুতো কেনা হয় এবং মহিলাদেরকে দিয়েই ব্যাবসা করানো হয়। প্রতিটি কাঁথা বানানোর জন্যে এক একজন শিল্পীকে দেওয়া হয় ৩০০-৯০০ টাকা। আর এই কাঁথাগুলি বাজারে বেচা হয় ৯০০-১২০০ টাকায়।
আইরিনের দুই ছেলেও এই ব্যাবসার সাথে যুক্ত।