ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

অরণ্যের দিনরাত্রি – বাংলার সেরা ৫টি জঙ্গল পর্যটন কেন্দ্র

March 20, 2020 | 4 min read

বাংলায় ঘোরার জায়গার অভাব নেই, পাহাড় থেকে সমুদ্র, জঙ্গল থেকে ঐতিহাসিক স্থান – কি নেই বাংলায়? সপ্তাহের শেষে অনায়াসেই হয়ে যেতে পারে একটা রোমাঞ্চকর ট্যুর। এরকমই কয়েকটি জঙ্গল পর্যটন স্থানের ঠিকানা রইলো।

১) সুন্দরবন

ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ভরা এই সুন্দরবনেই দেখা মেলে পৃথিবী-বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। সবুজ বনভূমি দেখার পাশাপাশি অফুরন্ত জলরাশির উপর ভেসে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণী-দর্শন এই সুন্দরবন ভ্রমণকে যথেষ্ট রোমাঞ্চকর করে তোলে। 

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার দর্শনীয় স্থান হল গোসাবায় হ্যামিল্টন সাহেবের বাংলো, বেকন বাংলো, পাখিরালয়, সজনেখালি ওয়াচ টাওয়ার, মিউজিয়াম ইত্যাদি।

কীভাবে যাবেন:

কলকাতা থেকে রেল বা সড়কপথে ক্যানিং স্টেশন। সেখান থেকে অটো, বাস কিংবা টোটোয় চেপে চলে যান সোনাখালি লঞ্চঘাট। কলকাতা থেকে সড়কপথেও সরাসরি আসা যায় সোনাখালিতে। এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৈখালি, রায়দিঘি ও গদখালি থেকেও সুন্দরবন ভ্রমনের ব্যবস্থা আছে।

কোথায় থাকবেন:

সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকেই লঞ্চে রাত্রি যাপন করতে পছন্দ করেন। এছড়াও সুন্দরবনের পাখিরালয়, দয়াপুর এলাকায় প্রচুর বেসরকারি হোটেল, লজ রয়েছে। এছাড়া সজনেখালিতে রয়েছে সরকারি পর্যটন আবাস। 

অন্যদিকে, ঝড়খালি, কৈখালিতে ও রয়েছে পর্যটন আবাস। এ ছাড়া বনি ক্যাম্পে রয়েছে সরকারি কটেজ। তবে এই সমস্ত সরকারি বাংলো বা কটেজে থাকতে হলে আগে-ভাগে পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইট থেকে বুকিং করতে হবে। 

তিন দিনে সুন্দরবন ঘুরতে জনপ্রতি প্যাকেজের খরচ আনুমানিক তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে।

২) ডুয়ার্স  

জলদাপাড়া

পশ্চিমবঙ্গের অরণ্য-মানচিত্রে জলদাপাড়ার স্থান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জলদাপাড়া একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য সুপরিচিত। একশৃঙ্গ গণ্ডার দেখতে এখনে বছরভর পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। সকাল ১০টা থেকে ২টো পর্যন্ত ডে-ভিজিট চালু থাকে। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলবে হাতি, গাউর, গণ্ডারের।

কীভাবে যাবেন:  শিয়ালদহ থেকে ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে চেপে পরদিন হাসিমারা স্টেশনে নামুন। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে মাদারিহাট হয়ে পৌঁছে যান জলদাপাড়ায়।

কোথায় থাকবেনঃ এখানকার হলং বন বাংলো ভারতবর্ষের সেরা বাংলোগুলির মধ্যে একটি, সেখানেই রাত কাটাতে পারবেন

গরুমারা জাতীয় উদ্যান 

জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যান ডুয়ার্সের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর বিপুল সম্ভার গরুমারার অহঙ্কার। উপরন্তু বিশ্বে লুপ্তপ্রায় প্রাণী একশৃঙ্গ গন্ডারের এটাই অন্যতম নিশ্চিন্ত আশ্রয়স্থল।

কীভাবে যাবেন: শিলিগুড়ির পি সি মিত্তাল বাসস্ট্যান্ড থেকে মালবাজার, চালসা হয়ে লাটাগুড়ি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিমি। জলপাইগুড়ি থেকে চালসা, মালবাজারগামী বাসও লাটাগুড়ির উপর দিয়ে যায় এবং মালবাজারে স্টেশন থেকে সরাসরি গাড়ি পাবেন।

কোথায় থাকবেন: গরুমারায় থাকার ব্যবস্থা এখন প্রচুর রয়েছে। লাটাগুড়িতে নানা মানের হোটেল এবং রিসর্ট আছে। বনবাংলোর জন্য খোঁজ করতে পারেন : ডিএফও, জলপাইগুড়ি, (০৩৫৬১) ২২৪৯০৭।

৩) ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি জঙ্গল

ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি রেঞ্জের অফিস সংলগ্ন এলাকায় তাঁবুতে জঙ্গলের মাঝে রাত্রি যাপন করতে পারবেন পর্যটকরা। খোলা আকাশের নীচে পাতা হয়েছে ৬টি তাঁবু। আপাতত প্রত্যেকটি তাঁবুতে ২ জন করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রত্যেকটি তাঁবু তৈরি করা হয়েছে সেমি লাক্সারি হিসেবে। তাঁবুতে রয়েছে দুটি খাট, দুটি চেয়ার, দুটি টেবিল, পাশে একটি অ্যান্টি চেম্বার রুম। আর সঙ্গে থাকছে বায়ো-টয়লেট বা জৈব শৌচাগারের ব্যবস্থা। এর জন্য দিন প্রতি একটি তাঁবুর ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ১২০০ টাকা। এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হচ্ছে যিনি বুকিং ও সমস্ত যোগাযোগ রাখবেন পর্যটকদের সঙ্গে।

৪) নদিয়ার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য

শাল সেগুন, মেহগনি, অর্জুন, নাগকেশর, পিয়াশাল গাছেরা মিলেমিশে সবুজ করে দেবে আপনার অবসর যাপন। কতরকমের জানা, অজানা পাখির ডাক ভুলিয়ে দেবে শহরের একমাত্রিক জীবন। চিতল হরিণ এই জঙ্গলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও বনবিড়াল, খরগোশ, ময়ূর, ঘড়িয়াল, পাইথন, শুয়োর প্রভৃতি বন্যপ্রাণ এই জঙ্গলে আছে।

কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে লালগোলাগামী ট্রেনে করে পৌঁছে যান বেথুয়াডহরী। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা। এস্প্ল্যানেড থেকে বাসে করেও যাওয়া যায়। আর গাড়ি করে যেতে হলে এনএইচ ৩৪ হয়ে কৃষ্ণনগর হয়ে পৌঁছে যান বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য।

কোথায় থাকবেন: ডব্লিউএসএফডি-এর কটেজ আছে জঙ্গলের মধ্যে। বেদু-ইন যাত্রীনিবাস আছে। যাওয়ার আগে বুক করে নিন থাকার জায়গা।

৫) সিঙ্গলীলা জাতীয় উদ্যান

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১৭০ প্রজাতির পাখি দেখা যায় এখানে।গভীর জঙ্গলে বাঁশবনে রেড পন্ডাদের দেখা মেলে। এ ছাড়া প্যাঙ্গোলিনও দেখতে পাওয়া যায়। 

মাছ ধরার নেশা যাঁদের আছে, চলে যেতে পারেন কাছেই শিরিখোলায়। মনের সুখে মাছ ধরুন, তার পর ভেজে খান। 

কীভাবে যাবেন: এনজেপি থেকে গাড়িতে চলে আসতে পারেন পালমাজুয়া। দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিমি। মানেভঞ্জন থেকে বাতাসি, ধোতরে হয়ে পালমাজুয়া পৌঁছতে হয়। পালমাজুয়ার কাছেই রয়েছে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান।

কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য রয়েছে সুন্দর হোমস্টে। সিঙ্গালিলা জাঙ্গল লজ। ০৯২৩১৫-৮১১৭৭। থাকা-খাওয়া সমেত জনপ্রতি ১৫০০ টাকা। ডান্স, গাইডের জন্য আলাদা চার্জ লাগে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#ExperienceBengal, #Bengal Tourism

আরো দেখুন