কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

শহরে এ বার স্যুইগি-জোম্যাটোর হাত ধরে মদের হোম ডেলিভারি

June 1, 2020 | 3 min read

পড়শি রাজ্য ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো এ রাজ্যেও স্যুইগি, জোম্যাটোর মতো অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থার মাধ্যমে মদের হোম ডেলিভারি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন লিমিটেড বা বেভকো।

মদের হোম ডেলিভারিতে আগ্রহী এমন অনলাইন সংস্থাগুলির কাছে আগ্রহপত্র চেয়েছে বেভকো। পশ্চিমবঙ্গে মদের একমাত্র হোলসেলার সংস্থা বেভকো-র ওই বিজ্ঞপ্তিতে (এনআইই নম্বর. বেভকো/২০২০/৫৪, তারিখ: ২৮.০৫.২০২০) বলা হয়েছে, ‘ ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন লিমিটেড ইতিমধ্যেই মদের ই-রিটেল ব্যবস্থা চালু করেছে। মদের হোম ডেলিভারিকে আরও অগ্রাধিকার দিতে নামী অনলাইন অর্ডারিং ও ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম পরিষেবাকারীদের কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাইছে বেভকো।’

আগামী ১৫ জুন বিকেল চারটের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র সহ আবেদনপত্র সল্টলেকে বেভকো-র কর্পোরেট দপ্তরে জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আগে আগামী বুধবার দুপুর দু’টোয় শুভান্ন-তে বেভকো-র কর্পোরেট দপ্তরে আগ্রহী সংস্থাগুলির সঙ্গে একটি বৈঠক করে তাদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রাজ্যের এক প্রশাসনিক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘রাজ্য আবগারি দপ্তর বহুদিন আগেই এই প্রস্তাব দিয়েছে। যেহেতু, মদে এফএসএসএআই লাইসেন্স বাধ্যতামূলক, তাই এটাও খাদ্য ও পানীয়র তালিকায় পড়ে। খাদ্য ও পানীয়র হোম ডেলিভারি হতে পারলে মদের কেন হবে না? আর সুপ্রিম কোর্টও এক জনস্বার্থ মামলায় তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখতে রাজ্য সরকারগুলি মদের অনলাইন বিক্রি বা হোম ডেলিভারি করতে পারে। এই সমস্ত কিছু মাথায় রেখেই অনলাইন ডেলিভারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, এর ফলে মদ যেমন এখনকার তুলনায় অনেক বেশি সহজলভ্য হবে, তেমনই বিক্রি বাড়লে সরকারি কোষাগারও ভরবে।

এই ব্যবস্থা শুরু হলে মদের দোকানে আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না। হাতে একটা স্মার্টফোন থাকলেই হল। অনলাইন অর্ডার দিয়ে আপনি আপনার বাড়িতে বসেই পছন্দের ব্র্যান্ডের মদ আনিয়ে নিতে পারবেন।

তবে বাড়িতে মদের হোম ডেলিভারি পেতে হলে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। করোনা-লকডাউনের মধ্যে স্যুইগি ও জোম্যাটো ঝাড়খণ্ড ও ওডিশাতে খাবার, মুদি পণ্যের পাশাপাশি মদ ডেলিভারিও শুরু করেছে।

একই ভাবে এবার পশ্চিমবঙ্গেও অনলাইন অর্ডারিং ও ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলিকে ক্রেতার নির্দিষ্ট ঠিকানায় মদ পৌঁছে দেওয়ার কাজে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতা ছাড়াও শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালদা, আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান, পুরুলিয়া ও খড়গপুরের মতো শহরে জোম্যাটোর উপস্থিতি রয়েছে বলে সংস্থার এক আধিকারিক জানান। স্যুইগিও কলকাতা বাদে রাজ্যের একাধিক শহরে খাবার ডেলিভারি দেয়। মদের হোম ডেলিভারি নিয়ে বেভকো যে আগ্রহপত্র চেয়েছে, সে ব্যাপারে স্যুইগি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘মদের অনলাইন অর্ডার নিয়ে তা হোম ডেলিভারির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহ একাধিক রাজ্যের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। পরিষেবার ধরন এবং দূরত্বর উপর স্যুইগি ডেলিভারি চার্জ নেয়।’

শহরে এ বার স্যুইগি-জোম্যাটোর হাত ধরে মদের হোম ডেলিভারি

করোনা-লকডাউনে সরকারের রাজস্ব আদায় একেবারে থমকে যাওয়ায় গত ৫ মে থেকে কনটেনমেন্ট এলাকার বাইরে থাকা মদ বিক্রির খুচরো দোকানগুলিকে খোলার অনুমতি দেয় রাজ্য প্রশাসন। তার পরের দিন অর্থাৎ ৬ মে থেকে মদের হোম ডেলিভারি করার জন্য বেভকো একটি ই-রিটেল ব্যবস্থাও চালু করে। ওই ই-রিটেল ব্যবস্থায় কোনও ক্রেতা তাঁর নাম, ঠিকানা, বয়স ইত্যাদি দিয়ে আবেদন করলে নিকটবর্তী মদের যে খুচরো দোকান হোম ডেলিভারি করছে, তারা কর্মী মারফৎ নির্দিষ্ট ঠিকানায় সরবরাহ করে দিচ্ছে।

উত্তর কলকাতা সহ সল্টলেকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এ ভাবে মদের হোম ডেলিভারি করার দায়িত্ব পেয়েছে রাজেশ মিশ্রর সংস্থা। সরকারের এই নয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা একটা মদের বোতল ডেলিভারি করে ক্রেতার কাছ থেকে ৫০ টাকা ডেলিভারি চার্জ নিই। আমাদের এই চার্জটা সরকার একটু বাড়িয়ে দিলে পারত। ডেলিভারি চার্জ বাড়লে আমরাই বেশি কর্মী দিয়ে কাজটা করে দিতাম।’

পশ্চিমবঙ্গে প্রায় চার হাজার মদের দোকানের মধ্যে বর্তমানে খোলা রয়েছে আড়াই হাজারের মতো দোকান। বেভকো-র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে সমস্ত অনলাইন ডেলিভারি সংস্থাকে ক্রেতাদের কাছ থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারি করার কাজে নিযুক্ত করা হবে, তাদের তা কিনতে হবে মদের খুচরো দোকানগুলি থেকে। অর্থাৎ, তারা এমআরপি-তে দোকান থেকে মদ কিনে তা ক্রেতার ঠিকানায় ডেলিভারি করবেন এবং সেই বাবদ একটা ডেলিভারি চার্জ ক্রেতার থেকে নেবেন। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে মদের খুচরো বিক্রেতারা।

উত্তর শহরতলির এক দোকান মালিকের বক্তব্য, ‘দেশি, বিলিতি, বিদেশি— সমস্ত রকম মদের দামের উপর রাজ্য সরকার ৩০ শতাংশ হারে বিক্রয় কর বসানোয় বহু সুরাপ্রেমীর কাছে তাঁর পছন্দের ব্র্যান্ড আর্থিক সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে। রাজ্যে এমন বহু দোকান রয়েছে যেখানে এখন দোকান খোলার পর ‘বউনি’ হতে এক-দু’ঘণ্টা লেগে যায়। করোনা-লকডাউনের আগে দৈনিক বিক্রি যা ছিল, বর্তমানে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা সরকার অনলাইনের নামে এই ব্যবসা বড় কিছু সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’

তবে এই আশঙ্কা অমূলক বলে উড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘অনলাইন ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলি তো রিটেল শপ থেকে এমআরপি-তে মদ কিনে তা হোম-ডেলিভারি করবে। বেভকো যে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থাগুলিকে সরাসরি বিক্রি করবে না তা তো বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানানো রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মদের দোকান মালিকদের ব্যবসা কেন উঠে যাবে?’
তথ্যসূত্র: কৌশিক প্রধান , এই সময়

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #swiggy, #zomato, #alcohol delivery

আরো দেখুন