আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

জর্জের জন্য পথে প্যারিসও

June 4, 2020 | 2 min read

সেনা নামানো, ‘ঠান্ডা’ করে দেওয়ার হুমকিতেও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উল্টে, প্রতিবাদের আগুন আমেরিকার গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়ার মতো দেশেও। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা ভুলে, দেশ-কাল-বর্ণ নির্বিশেষে ‘বিদ্বেষ’ ভাইরাসের বিরুদ্ধে পথে নামছেন মানুষ।

জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের ঘাড়ের উপর হাঁটু চেপে বসে রয়েছেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলা সত্ত্বেও নিস্তার পাননি জর্জ। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। ২৫ মে, মিনিয়াপলিসে জর্জের ‘খুনে’র প্রতিবাদেই রাস্তায় নেমেছেন আমেরিকার মানুষ। বিক্ষোভকারী-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে কমপক্ষে ১১ জনের। মঙ্গলবারও ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে শান্তিপূর্ণ মিছিলে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। প্রতিবাদীদের উপর নজরদারির জন্য ওয়াশিংটনের আকাশে চক্কর খাচ্ছে সেনার কপ্টার। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে রাতের কার্ফু অগ্রাহ্য করে পথে নামেন শয়ে শয়ে মানুষ, স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। লস অ্যাঞ্জেলেস, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া, সিয়াটেল, মিনিয়াপলিস— সর্বত্র প্রতিবাদী মিছিল। সিয়াটেল, পোর্টল্যান্ড আর আটলান্টায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের খবর মিলেছে।

ফ্লয়েডের নিজের শহর হাউস্টনে এ দিন হাজার ষাটেক মানুষ তাঁকে স্মরণ করে রাস্তায় নামেন, ছিলেন ফ্লয়েডের বাড়ির লোকজনও। তাঁরা প্রত্যেকেই চান ন্যায় বিচার, কিন্তু প্রতিবাদের নামে ভাঙচুর, অশান্তি চান না। একই বার্তা পোপ ফ্রান্সিসের। বলেন, ‘বর্ণবিদ্বেষ মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু হিংসার দ্বারা কিছুই পাওয়া যায় না, বরং হারায় অনেক কিছু।’

জর্জ ফ্লয়েড খুনের প্রতিবাদে প্যারিসে

সেই হিংসার দিকটা তুলে ধরেই নিজের আচরণের পক্ষে যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক একটি চার্চে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভাকারীরা। সোমবার সেই চার্চের সামনে গিয়ে বাইবেল হাতে ছবি তোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ট্রাম্পের এই আচরণ বিবিধ মহলে সমালোচিত হয়। মঙ্গলবার টুইটারে ট্রাম্পের সাফাই, ‘আপনারা ভুল বুঝেছিলেন! বিক্ষোভকারীরা যদি এতটাই শান্তিপূর্ণ, তা হলে আগের দিন চার্চে আগুন লাগালো কেন? লোকে আমার হাঁটা পছন্দ করেছে…’

ট্রাম্পের সেনা নামানোর হুমকিও সমালোচিত হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব মার্ক এসপার ট্রাম্পের বিরুদ্ধ মত পোষণ করে বলেন, ‘এই ভাবে সেনা নামানো একেবারে শেষ অস্ত্র, এখনও পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি।’ জার্মানির বিদেশমন্ত্রী মনে করেন, এ ভাবে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালছেন ট্রাম্প, তাঁর অবিলম্বে সুর নরম করা প্রয়োজন। এ দিকে, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়া, ব্রাজিলে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তাঁরা সকলেই জর্জের জন্য ন্যায়বিচার চান। প্যারিসে ২০১৬ সালে আডামা ট্রায়োরে নামে এক জন পুলিশি হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন। সেই মৃত্যুর সঙ্গে ফ্লয়েডের মৃত্যুকে মিলিয়ে পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন প্যারিসের মানুষ। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধও হয়েছে তাঁদের। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুছে দিয়েছে দেশ-কালের গণ্ডি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Black Lives Matter, #george floyd murder, #paris

আরো দেখুন