কেন বারবার চীন ভারত সংঘাত
ভারত ও চীন। বিশ্বের মানচিত্রে প্রবল শক্তিধর দুই রাষ্ট্র, ফের একবার সীমান্তে মুখোমুখি। এবার সমস্যার কেন্দ্রে লাদাখ অঞ্চল। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র জড়িয়ে পড়েছে এক বেনজির লড়াইয়ে। এই প্রেক্ষিতে ফিরে দেখা যাক ভারত চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের ইতিহাস।
১৯৬২ সাল
পূর্ণমাত্রার ভারত-চীন যুদ্ধ। মূলত অরুণাচলপ্রদেশ এবং লাদাখের এই এলাকা দিয়ে পিএলএ ঢোকে ভারতে। টানা এক মাসেরও বেশী সময় ধরে উত্তপ্ত ছিল সীমান্ত। যুদ্ধ শেষে পিপলস লিবারেশন আর্মি যেখানে ছিল সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার পিছিয়ে যায়। ভারতের হাতছাড়া হয় আকসাই চীন।
১৯৬৭ সাল
চীন থেকে অনুপ্রবেশ রুখতে সিকিমের নাথুলার কাছে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় আচমকা চীনের সেনা হামলা করে। কিন্তু চীন এমন কিছু করতে পারে ৬২ থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছিল ভারতীয় সেনা। পাল্টা প্রত্যাঘাতে গুঁড়িয়ে যায় চীনের সেনার তৈরী করা বাঙ্কার। ভারতীয় সেনার গুলিতে মৃত্যু হয় শ’তিনেক চীনা সৈন্যের।
নাথুলায় মুখ পোড়ানোর পর চীন ফের একই কায়দায় হামলা চালায় আরেক গিরিপথ চোলায়। চেষ্টা করে দখল নেওয়ার। ভারতীয় সেনা সেই চেষ্টাও বানচাল করে দেয়। তবে মৃত্যু হয় ৮৮ জন ভারতীয় সেনাকর্মীর।
১৯৮৭ সাল
অরুণাচলপ্রদেশকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেয় ভারত। তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে চীন। সীমান্ত টপকে ভারতে ঢুকে হেলিপ্যাড বানানোর প্রয়াস নেয় চীনা সেনা। কিন্তু প্রস্তুত ছিল ভারতীয় সেনাও। তবে এবার আর হাতাহাতি কিংবা গোলাগুলি নয়। ভারতীয় সেনা চীনের মালপত্র হেলিকপ্টারে চাপিয়ে আবার চীনের ভূখণ্ডে ফেলে আসে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে সে যাত্রায় উত্তেজনা প্রশমন হয়।
২০১৭ সাল
দীর্ঘদিন পর ফের চীনের প্ররোচনা। এবার ডোকলামে। লাদাখে যেমন ভারতের রাস্তা বানানোর বিরোধিতা করছে শি জিনপিংয়ের দেশ, অনেকটা তেমনই ডোকলামে চীনের বাহিনীর রাস্তা তৈরী করা নিয়ে আপত্তি জানায় ভারত। প্রবল উত্তেজনা শুরু হয় দু’পক্ষে। ৬ সপ্তাহ টানা আলোচনার পর দু’পক্ষই সরে আসে। বন্ধ হয় চীনের রাস্তা তৈরীর কাজ।
২০২০ সাল
৫ ও ৬ মে পূর্ব লাদাখের প্যাঙগঙ লেকের কাছে চীনের সেনার সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর জওয়ানদের ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি। ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল চীনা বাহিনী। তাদের বের করে ভারত।
অর্থাৎ একটা বিষয় পরিষ্কার, সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই আড়ালে আবডালে সংঘাত জিইয়ে রেখেছে চীন। কিন্তু ভারতের সেনাও ৬২তে আটকে নেই। ফলে চীনের উসকানির যে যথোপযুক্ত জবাব এদিক থেকেও যাবে, লাদাখের সাম্প্রতিক ঘটনা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ।