পেট্রল ও ডিজেলের মূল্য আকাশ ছোঁয়া, দুশ্চিন্তা মধ্যবিত্তের
১৬ মার্চ থেকে টানা ৮২ দিন অপরিবর্তিত থাকার পর বাড়ল পেট্রল-ডিজেলের দাম। ৬ জুন থেকে এক পক্ষকালের মধ্যে পেট্রলের দাম লিটার পিছু ৭.৩২ টাকা এবং ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৭.৪৫ টাকা বাড়িয়েছে তেল সংস্থাগুলি। শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পগুলিতে পেট্রলের দাম ছিল ৮০.৬২ টাকা প্রতি লিটার। ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৭৩.০৭ টাকা প্রতি লিটারে।
লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় পেট্রল-ডিজেলের, বিশেষ করে ডিজেলের দামে এত অল্প সময়ে এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পণ্য ও গণপরিবহণের খরচের মাধ্যমে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিতে ইন্ধন জোগাবে সন্দেহ নেই। ডিজেলের দাম বাড়ায় বেসরকারি বাসের মালিকরা ইতিমধ্যেই ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। তাঁদের দাবি, করোনা সংক্রমণের ভয় ও সরকারি নির্দেশের জেরে এমনিতেই কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। তার ওপর এত চড়া দরে ডিজেল কিনতে হলে, তাঁদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই মালিকদের দাবি, ভাড়া বাড়ানো হোক। এর সঙ্গে রয়েছে উম্পুনের ধাক্কা। ঘূর্ণিঝড়ে বাজারে শাক-সব্জির দাম আকাশছোঁয়া। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছ-মাংসের দাম।
এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে মুদিখানার পণ্যের দামও বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৯.২৮ শতাংশ। তবে তথ্যের অভাবে কেন্দ্রীয় সরকার এপ্রিল ও মে মাসের দেশে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেনি।
এপ্রিল-মে মাসে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়েনি। তাতেই মূল্যবৃদ্ধি চড়চড় করে বাড়তে শুরু করে। জুন মাসে ইতিমধ্যেই ওই দুই জ্বালানির দাম যা বাড়ানো হয়েছে, তার প্রভাবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনে অনেকেই রুজি-রোজগার হারিয়েছেন। একাধিক সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই, বেতনহ্রাস—এ সবের প্রভাব পড়েছে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার উপর। ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অন হাউসহোল্ড কমজিউমার এক্সপেনডিচার এবং অল ইন্ডিয়া ডেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সার্ভের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মত, জুন মাসের শেষে দেশে শহরবাসীদের প্রায় ৩০ শতাংশের আর্থিক সঞ্চয় ফুরিয়ে যাবে এবং তাঁদের পক্ষে জীবনযাপনের ন্যূনতম আবশ্যিক খরচটুকু করার মতো টাকাও হাতে থাকবে না। তবে, সরকারি আয়ের সহায়তা ও কর্মসংস্থান প্রকল্পের কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর্থিক অবস্থা অতটা খারাপ হবে না।