আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

লন্ডনে লাঞ্চের টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে!

June 23, 2020 | 2 min read

চাইলে ওঁরা চোখ বন্ধ করে থাকতেই পারতেন। তাতে কারই বা কী বলার ছিল? কিন্তু এখন হাত গুটিয়ে থাকা বা নির্লিপ্ত হয়ে থাকার সময় বলে ওঁদেরই মনে হয়নি। একে করোনা পরিস্থিতি, তার উপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত— এই অবস্থায় বিলেতের প্রবাসে থেকেও ওঁরা অনুভব করছেন, বাংলার জন্য, নিজের দেশের জন্য কিছু করা উচিত। আর সেই মনোভাব থেকেই নানা ভাবে নানা উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহ করছেন লন্ডনের প্রবাসী বাঙালিরা। যাঁদের সঙ্গে আছেন ব্রিটেনের অন্য বেশ কয়েক জন প্রবাসী ভারতীয়, যাঁদের শিকড় পশ্চিমবঙ্গে না-থাকলেও আছে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে।

আম্পান-বিধ্বস্ত বাংলার তাঁতশিল্পী ও ক্ষতিগ্রস্ত কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার জন্য অর্থ সংগ্রাহক (ফান্ড রেজিং) উদ্যোগ হিসেবে আগামী রবিবার, ২৮ জুন লাঞ্চের আয়োজন করা হয়েছে লন্ডনে। আয়োজন করেছে সেই শহরের ‘লন্ডন শারদোৎসব’ ও ‘দ্য বেঙ্গল হেরিটেজ’ নামে দু’টি সংগঠন। লন্ডনের বাঙালি খাবারের একটি রেস্তোরাঁ ও একটি হোম কেটারিং সংস্থার কর্ণধার দুই ভারতীয় পরিবারের মেয়ে পৃথা ও সিমনকে এই উদ্যোগে পাশে পেয়েছেন আয়োজকরা। অন্যতম আয়োজক সৌরভ নিয়োগী বলেন, ‘বাড়িতেই খান বা যেখানেই খান, রবিবারের লাঞ্চের জন্য একটা খরচ তো আছেই। তাই, সবার কাছে আমাদের আবেদন, যাতে তাঁরা আমাদের কাছ থেকে ২৮ জুন দুপুরের খাবারটা কেনেন।’ সৌরভের কথায়, ‘এর থেকে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেকের বেশি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হবে। কিছুটা খরচ কাঁচামালের জন্য ধরা হয়েছে।’ অবশ্য করোনা-সতর্কতার কথা মাথায় রেখে, পাত পেড়ে খাওয়া কিংবা বুফেনয়, গোটা ব্যবস্থাই হচ্ছে হোম ডেলিভারি-কেন্দ্রিক।

পেশায় সৌরভ অর্থনীতি বিষয়ক পরামর্শদাতা। তাঁর বন্ধু ও এই ব্যবস্থাপনার আর এক আয়োজক অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা চালান। ওঁরা দু’দশের বেশি সময় বিলেতে আছেন। অনির্বাণের বক্তব্য, ‘আমাদের লক্ষ্য, এই উদ্যোগের মাধ্যমে মোট ২০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা) সংগ্রহ করা, যার ৫০ শতাংশের বেশি আমরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেবো। বাকি টাকাটা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সমস্যায় পড়া থিয়েটার-শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর কাজে খরচ করা হবে।’

একই সঙ্গে ব্রিটেনের স্লাও শহরের বঙ্গসন্তান ও ভারতীয়দের আর একটি সংগঠন ‘আড্ডা’র তরফে একই ভাবে ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহ অভিযানে হাত দেওয়া হয়েছে। আম্পানে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের জন্য সেখানে অর্থ সংগ্রহ চলছে। সংগঠনের তরফে এষা চক্রবর্তী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটা সময় লাগবে। সেই কথা মাথায় রেখেই অর্থ সংগ্রহ করে দ্রুত তা দেশে পাঠানো হবে। কারণ আমাজন অরণ্যের মতো সুন্দরবনও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’ কলকাতায় এই সংস্থার হয়ে কাজ করবে ‘মেরি ওয়ার্ড সোশ্যাল সেন্টার’।

সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তহবিল সংগ্রহ অভিযানে উৎসাহ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী সুরঞ্জন সোম। তাঁর সংস্থা ‘গ্লোবাল বেঙ্গলি’র তরফে ৬ জুন বাংলার এক ঝাঁক শিল্পীদের নিয়ে অনলাইন কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে শর্মিলা ঠাকুর, অর্পণা সেন, কৌশিক সেন, পিসি সরকার (জুনিয়র), রূপঙ্কর, রূপম ইসলাম, মীরের মতো বহু শিল্পী ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গের জন্য অর্থ সংগ্রহে উৎসাহ দিতে অনলাইনে নিজেদের শিল্পচর্চা করেছেন। আবার এই উদ্যোগে এবং লন্ডনে লাঞ্চের আয়োজনেও রাজ্যের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বাঁচবো’ সামিল হয়েছে।

সুরঞ্জনের কথায়, ‘পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০টি বাঙালি সংগঠনের ত্রাণ সংগ্রহ অভিযোনে গতি এসেছে। প্রায় আধ মিলিয়ন ডলার (পৌনে চার কোটি টাকার কাছাকাছি) সংগ্রহ করা গিয়েছে।’ আবার বাংলার যে সব শিল্পী এখন করোনা পরিস্থিতিতে কাজ না-থাকার ফলে সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের জন্য অর্থ সংগ্রহে আর একটি অনলাইন কনসার্টের আয়োজন করতে চলেছেন ওই উদ্যোক্তারা।

তথ্যসূত্র: জয় সাহা , এই সময়

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#CM Relief Fund, #London

আরো দেখুন