ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

আলিপুরদুয়ার জেলার এই জায়গাগুলিতে গেছেন? 

June 25, 2020 | 3 min read

২০১৪ সালের ২৫ জুন গঠিত হয় আলিপুরদুয়ার জেলা। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চল ভুটান তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জেলায় বহু দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।

এই পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে প্রতি বছর বহু দেশ-বিদেশের পর্যটক আসে। জেলার বেশির ভাগ অংশ ঘন বনাঞ্চল দ্বারা আবৃত। এই বনাঞ্চল হল ভারতীয় গণ্ডার ও হাতির প্রধান বাসভূমি। এছাড়া এখানে বাঘ, চিতা, হরিণও নানাধরনের পাখি রয়েছে।

দেখে নেওয়া যাক এই জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানঃ

বক্সা জাতীয় উদ্যান

আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা পাহাড় অঞ্চলে বক্সা জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। এখানে একটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এই উদ্যানে বাঘ, সিভেট ও রেড জঙ্গল ফাউল দেখা যায়। এই উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত এক দুর্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া, উদ্যানের মধ্যে একটি শিব মন্দিরও আছে। এটিকে স্থানীয় মানুষেরা পবিত্র মনে করে।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান

পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান তোর্সা নদীকেন্দ্রিক বনাঞ্চলময় সুবিস্তীর্ণ তৃণভূমি। এখানকার জীবজন্তুর মধ্যে অবলুপ্তপ্রায় একশৃঙ্গ গণ্ডার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জলদাপাড়ায় পর্যটকদের জন্য এলিফ্যান্ট সাফারির মাধ্যমে জীবজন্তু পরিদর্শনের ব্যবস্থা আছে।

চিলাপাতা বনাঞ্চল

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও বক্সা জাতীয় উদ্যানের মধ্যবর্তী হাতি করিডোর চিলাপাতা বনাঞ্চল একটি গভীর বনাঞ্চল । এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু দেখা যায়। এখানে আগে গণ্ডার দেখা যেত। এখন এখানে চিতাবাঘ দেখা যায়। রাভা উপজাতির মানুষেরা এই জঙ্গল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। 

পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন পর্ষদ চিলাপাতার কোদালবস্তিতে একটি পরিবেশ-পর্যটন রিসর্ট চালায়। এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হল নলরাজা গড়। এটি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত যুগে নির্মিত স্থানীয় নল রাজাদের দুর্গ।

জয়ন্তী

আলিপুরদুয়ার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বক্সা জঙ্গলের ধার ঘেঁষা জয়ন্তীকে বলা হয় ডুয়ার্সের রানি। ভারত-ভূটান সীমান্তবর্তী পাহাড়ে ঘেরা জয়ন্তী নদীর ধারে এককালে কোনও গ্রাম ছিল বলে শোনা যায়। এখন তার অস্তিত্ব না থাকলেও রয়েছে অল্প বিস্তর চিহ্ন। গর্বের গতিপথ হারিয়েছে জয়ন্তী নদীও। তবু সৌন্দর্য্যে একফোঁটা ভাঁটা পড়েনি। 

পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা নুড়ি-পাথরের শুকনো নদীপথে বিরাজমান অপার শান্তি। দুদিকে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার একটি উঠেছে ছোট মহাকালের দিকে এবং অন্যটির গন্তব্য বড় মহাকাল মন্দির।

আলিপুরদুয়ার

রাজাভাতখাওয়া

আক্ষরিক অর্থে রাজাভাতখাওয়ার অর্থ যেখানে রাজা ভাত খেয়েছিলেন৷ জনশ্রুতি অনুসারে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কোচবিহারের রাজা বর্তমান রাজাভাতখাওয়া অঞ্চল থেকে ভুটানের রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার প্রতিজ্ঞা করে তারপর ভাত খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ 

কিছুদিন পরে ভুটানের রাজা স্বয়ং এই অঞ্চল ত্যাগ করলে মিত্রতার গ্রহণের সাথে ঘনজঙ্গলাবৃত জনপদটিতে ভোজনের আয়োজন করা হয়৷ এভাবে রাজাভাতখাওয়া নামের উৎপত্তি৷  

আলিপুরদুয়ার জেলাতে অবস্থিত একটি ছোটো জনবসতি৷ এটি সড়কপথে জেলাসদররের সাথে যুক্ত হলেও চারদিক দিয়ে বক্সা জাতীয় উদ্যান দ্বারা পরিবেষ্টিত৷ অঞ্চলটি মনেরম প্রাকৃৃতিক পরিবেশের জন্য জনপ্রিয়৷

টোটোপাড়া

টোটোপাড়া একটি ছোট পাহাড়ী গ্রাম, যা ভারত-ভুটান সীমান্তে তাদিং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। গ্রামটি একটি নৃতাত্ত্বিক পর্যটনস্থল। এটি বিশ্বে টোটো উপজাতির একমাত্র আবাসস্থল। এ গ্রাম ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও এই উপজাতির বসবাস নেই। 

গ্রামটি মাদারিহাট থেকে প্রায় ২২ কিমি দূরে অবস্থিত, যা প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত বিখ্যাত জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। 

এর উত্তরে ভুটানের সীমান্ত তাদিং পাহাড়ের পাদদেশ, পূর্বে তোর্সা নদী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওরি নদী এবং তিতি বনাঞ্চল যাকে হাওরি নদী বিভক্ত করেছে।

লেপচাখা

ভুটানের কাছে ছোট্ট গ্রাম লেপচাখা যা আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা-জয়ন্তী ন্যাশনাল পার্ক এর একটি অংশ। এই জায়গাটিকে Heaven of Dooars বলা হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি এই গ্রামটি। কখনও রোদ ঝলমলে দুপুরের আকাশে হঠাতই উড়ে আসা মেঘের চাদর, ক্ষণিকের জন্য ঢেকে দিয়ে যায় লেপচাখাকে। 

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা গ্রামটি। সুন্দর বনানীর মধ্য দিয়ে চওড়া পথ। ভদ্রস্থ চড়াই পথ। যেকোনো বয়সের মানুষ এ পথে আরামে চলতে পারবেন। পথের মাঝে দু’ধারে নানা রঙের ফুলের গাছ। পথের দু’পাশের দৃশ্য চলার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tourists, #alipurduar

আরো দেখুন