বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বহু বিতর্কে কালিমালিপ্ত জ্যোতি বসুর শাসনকাল

July 7, 2020 | 2 min read

দু’দশকের বেশি সময় ধরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। তিনি ছিলেন দেশের  অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। সেই সময় কৃষিতে বাংলা নজির গড়েছিল। ওনার রাজনৈতিক জীবনে প্রচুর সাফল্য যেমন ছিল, তেমনই বিতর্কও পিছু ছাড়েনি জ্যোতি বসুকে। 

গণহত্যা থেকে রাজনৈতিক ঔদ্ধত্ব, স্বজনপোষণের অভিযোগ থেকে ‘চোরেদের সরকার’ এর তকমা – নানা ঘটনায় কালিমালিপ্ত হয়েছে জ্যোতি বসুর শাসনকাল। 

দেখে নেওয়া যাক সেরকমই কিছু বিতর্কিত ঘটনাঃ

গণহত্যা

১৯৭৯ সালে সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে সংঘটিত হয় এক ভয়ঙ্কর গণহত্যা। বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের উচ্ছেদের জন্য পুলিশ দ্বীপটি ঘেরাও করে। গুলি করে মারা হয় বহু মানুষকে। 

১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল বালিগঞ্জের বিজন সেতুর ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৯৩ সালের, ২১ জুলাই। নির্বাচনী সংস্কারের দাবিতে কর্মসূচি নিয়েছিল তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই সময়ের যুব নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবাদরত যুবকর্মীদের ওপর গুলি চালায় পুলিস, নিহত হয়েছিলেন ১৩ জন যুব কর্মী।

২০০০ সালে বীরভূমের নানুরে ১১ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়। তখনও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। আর তাছাড়াও অভিযোগ ওঠে তাঁরই দলের বিরূদ্ধে। 

ধর্ষণ

১৯৯০ সালের ৩০শে মে রাজ্য সরকারের দু’জন এবং ইউনিসেফের একজন স্বাস্থ্য আধিকারিককে বানতলায় ধর্ষণ করা হয়। তাদের মধ্যে দুজন মারা যান। 

১৯৯৬ সালে এক ধর্ষিতা মূক-বধির কিশোরীকে নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংসে বিচার চাইতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পুলিশ তাঁর চুলের মুঠি ধরে, লাথি মেরে, টেনেহিঁচড়ে বের করে দিয়েছিল৷ সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন যেসব সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী তাঁদেরও পুলিশ ছাড়েনি৷ পুলিশের লাঠির ঘায়ে ভেঙেছিল একাধিক আলোকচিত্রী-সাংবাদিকের ক্যামেরার লেন্স৷

২০০৩ সালে ধানতলায় ৪ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সহ মোট ৬ জনকে ধর্ষণ করা হয়। তখন যদিও রাজ্যের ভার ছিল বুদ্ধ বাবুর ওপর। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই বর্বরোচিত ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, তিনি সপাটে বলে দেন “ এরম তো হয়েই থাকে।”

ইংরাজি শিক্ষা তুলে দেওয়া

জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রাথমিক শিক্ষায় ইংরাজি ভাষা তুলে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। জ্যোতি বাবুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকারের নেওয়া অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত বলে অনেকেই মনে করেন।

শিক্ষায় রাজনীতি

স্বজনপোষণ, নিজের লোকেদের সুবিধে পাইয়ে দেওয়া, চাকরি দেওয়া তো বটেই এমনকি শিক্ষায় রাজনীতিকরণের জন্যেও বার বার নিন্দিত হয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। 

বিশেষত, যখন অনিল বিশ্বাস শিক্ষা সেলের প্রধান হন তখন স্কুল, কলেজ তো বটেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও অনিল বিশ্বাসের সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়েছে। 

শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ থেকে শুরু করে তাদের উন্নতিও তাঁর উপর নির্ভরশীল ছিল। যা ‘অনিলায়ন’ নামে পরিচিত হয়। জ্যোতি বাবু সবটাতেই অনিলের পক্ষে থেকেছেন।

ছেলের কীর্তি ও জ্যোতি বসুর মৌনতা

জ্যোতি বসুর ব্যবসায়ী ছেলে চন্দন বসুর ব্যবসা সেই সময় হঠাতই বেশ ফুলে ফেঁপে ওঠে। বিরোধীদের দাবি ছিল, চন্দন বসু পেছনের দরজা দিয়ে সরকারি সুবিধে ভোগ করেছেন। অভিযোগ, জ্যোতি বসু সব জেনেও মৌন থেকেছেন।

শিল্পের সর্বনাশ

জ্যোতি বাবুর আমলে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ানগুলি শিল্প ক্ষেত্রে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। দাবি আদায়ের নামে জঙ্গিপনা, মালিকদের হুমকির দিয়ে তাদের কথা শুনতে বাধ্য করা এবং কথায় কথায় ধর্মঘট পশ্চিমবাংলার শিল্পক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে ও বহু কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

আরো দেখুন