নজিরবিহীন সঙ্কটে আমেরিকায় পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়ারা
করোনা-আতঙ্কের মধ্যেই এ বার নজিরবিহীন সঙ্কটে আমেরিকায় পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়ারা। সৌজন্যে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত।
আমেরিকার ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইসিই) বিভাগ সোমবার জানিয়ে দিয়েছে, কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস যদি পুরোপুরি ভাবে অনলাইন হয়ে যায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট ক্লাসের বিদেশি পড়ুয়াদের আমেরিকা ছাড়তে হবে। অর্থাৎ, এফ-১ বা এম-১ ভিসায় আমেরিকায় এসেছেন সেই সমস্ত পড়ুয়ারা শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস করার জন্য আমেরিকায় থাকতে পারবেন না। আর যদি থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে ক্লাসরুমে পঠনপাঠন চলছে এমন কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে তাঁদের। পড়ুয়ারা নিজে থেকে ফিরে না গেলে, তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই গাইডলাইনে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে এমন অনলাইন কোর্সের জন্য কোনও বিদেশি পড়ুয়াকে ভিসা দেওয়া হবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নির্দেশের জেরে যে দেশের পড়ুয়ারা সবথেকে বেশি বিপাকে পড়লেন, তাঁর মধ্যে অন্যতম ভারত।
২০১৯-এর পরিসংখ্যান বলছে, শুধু এই এক বছরেই ভারত থেকে ২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী আমেরিকায় গিয়েছেন পড়াশোনা করতে। এক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে চিনের পরেই ভারত। করোনা-পরিস্থিতির জেরে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ক্লাস অনলাইন হয়ে গিয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি তো জানিয়ে দিয়েছে যে, প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ক্লাস করবে না তারা। নয়া নির্দেশের জেরে যদি পড়ুয়াদের ঘরে ফিরতে হয়, তা হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার থেকে জটিল পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না। কারণ, সংক্রমণের জেরে ভারতের মতো বহু দেশই আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করে রেখেছে। সেক্ষেত্রে বিশেষ বিমানে বাড়ি ফেরা খরচসাপেক্ষ এবং ঝঞ্ঝাটপূর্ণও বটে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত শিক্ষাবিদ থেকে রাজনীতিকরাও। দ্য আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের (এসিই) কথায়, ‘এই নির্দেশ ভয়ঙ্কর।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যখন সামাজিক দূরত্বের বিধি বজায় রেখে ক্লাস চালুর পথ খুঁজছে তখন এ ধরনের গাইডলাইন বিভ্রান্তি তৈরি করবে বলেও মনে করছে তারা। আরও এক ধাপ এগিয়ে মার্কিন সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং বিদেশি-বিদ্বেষী সিদ্ধান্ত।’
হোয়াইট হাউসে আসার পর থেকেই ভিসা নীতি কঠোর করার কথা বলে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই লক্ষ্যে একাধিক সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন যা ঘিরে বিস্তর বিতর্কও হয়েছে। গত সপ্তাহে তিনি এগজিকিউটিভ অর্ডারে সই করে নির্দেশ দিয়েছেন, এ বছর নতুন করে আর কাউকে এইচ ১-বি এবং এল-১ ভিসা দেওয়া হবে না। যার জেরে একদিকে যেমন বহু চাকরিপ্রার্থী বিপাকে পড়লেন, তেমনই বিপাকে পড়লেন সেই সব মানুষগুলি যাঁদের পরিজন আমেরিকায় রয়েছেন। সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই এই নির্দেশ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জলঘোলা হতে শুরু হয়েছে।