কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

ইলিশের টানে উপচে পড়ছে ভিড়, ব্রাত্য সামাজিক দূরত্ব

July 11, 2020 | 2 min read

‘একদম টাটকা, একদম টাটকা’ বলে বিকট চিৎকার করছিলেন বিক্রেতা। তাঁকে ঘিরে কয়েক ডজন উৎসুক মুখ। একে অন্যকে ঠেলে সরিয়ে সামনে যাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা। সামাজিক দূরত্ব, করোনার বাড়বাড়ন্ত, একদিনে হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর-সবই যেন তুচ্ছ। মানিকতলা বাজারে ইলিশ বিক্রেতার সামনে যাঁরা ভিড় করেছেন, তাঁদের এ সবে সত্যিই কিছু যায় আসে না।

একটা মাঝারি মাপের ইলিশ তুলে একটু টিপেটাপে দেখে তাচ্ছিল্যভরে ফেলে দিলেন এক খদ্দের। বললেন, ‘টাটকা নয়। ভালো কিছু থাকলে দেখা।’ ফেলে দেওয়া মাছটাই সযত্নে তুলে নিলেন আর একজন। দাম নিয়ে দরাদরির পর একটু বড় চাকা করে কাটার নির্দেশ দিলেন। যতক্ষণ মাছ কাটা হচ্ছে, পাশের ক্রেতার সঙ্গে সর্ষেবাটা দিয়ে ইলিশ বেশি উপাদেয়, না কি বড়ি-বেগুন দিয়ে ঝোল বেশি জমে, তা নিয়ে একদফা তর্কও সেরে নিলেন!

শুধু মানিকতলা বাজার নয়, গত দু’সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে বেলা পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে শহরের প্রায় সব ক’টা বড় বাজারে। সম্প্রতি শহরে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে বাঙালির এই মৎস্যপ্রীতি, বিশেষ করে ইলিশ-প্রেমকেই দায়ী করছেন অনেকেই। মাছের বাজারে যে ভাবে সতর্কতাবিধি বিসর্জন দিতে দেখা যাচ্ছে শহরবাসীকে, তা-ও এককথায় নজিরবিহীন।

এই প্রসঙ্গে মানিকতলা বাজারের পরিচালন কমিটির অন্যতম দুই সদস্য বাবলু দাস ও বিজয় সাউ বলছেন, ‘নিজেদের নিরাপদে রাখার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। তবে, মাছের-বিশেষ করে ইলিশের গন্ধ পেলে মানুষকে আটকানো মুশকিল।’

একই কথা শোনাচ্ছেন যদুবাবুর বাজারের পরিচালন কমিটির সদস্য বেণুদেব বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘সকালে মাছের বাজারে সাংঘাতিক ভিড় হচ্ছে। এক একজনের মাছ বাছা শেষই হচ্ছে না। আবেদন-নিবেদনেও কোনও কাজ হচ্ছে না।’ করোনা মোকাবিলায় নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মানছেন নাইসেডের এপিডেমিয়োলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান দীপিকা শূর। তিনি বলেন, ‘অপরিচিতর থেকে অন্তত চার থেকে ছ’ফুট দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। মাস্ক অনেকটা বাঁচায়। তবে নিরাপদ দূরত্ব মানতেই হবে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার বাহক মাস্ক পরে নেই, কিন্তু সুস্থ ব্যক্তি মাস্ক পরে রয়েছেন-এই রকমের ক্ষেত্রে সুস্থর সংক্রমণের সম্ভাবনা ৭০%। অন্য দিকে, আক্রান্ত মাস্ক পরে রয়েছেন অথচ সুস্থ ব্যক্তি মাস্ক পরে নেই, এমন ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির সংক্রমণের সম্ভাবনা নেমে আসে ৫%-তে। দু’জনেই মাস্ক পরে থাকলে সুস্থ ব্যক্তির সংক্রমণের সম্ভাবনা ১.৫%-তে নেমে আসে। যদিও বাজার সংলগ্ন এলাকায় ও বিভিন্ন চায়ের দোকানে অনবরত সতর্ক করা সত্ত্বেও ভিড় কমানো বা সব সময় মাস্ক পরে থাকার প্রবণতা কমই দেখা যাচ্ছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Social Distancing, #hilsha, #kolkata markets

আরো দেখুন