মৃত্যুর পরেও সিপিএম সম্মান জানায়নি প্রবীণ এই নেতাকে
সোমনাথ চট্টেপাধ্যায় ভারতীয় রাজনীতির একজন কিংবদন্তী। আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রকে তিনি আরও সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। সব দলের সব সাংসদ তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
দলের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের এক অনন্য ইমেজ তৈরী করেছিলেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সিপিএমের একসময়ের একনিষ্ঠ কর্মী ও প্রবীণ নেতা পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালে নির্বাচিত হন লোকসভার সাংসদ হিসেবে। সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে তাঁর অন্তর্ভুক্তি লোকসভায়। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোট ১০ বার লোকসভায় সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শুধুমাত্র ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়।
১৯৯৬ সালে তাঁকে বিশিষ্ট্য সাংসদ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর প্রোটেম স্পিকার হিসেবে নিযুক্ত হন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ১৪তম লোকসভায় তিনি নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ হিসেবে। গণেশ বাসুদেব মাভালঙ্কার পর তিনিই প্রথম প্রোটেম স্পিকার যাঁকে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত করে লোকসভা।
তিনি অধ্যক্ষ থাকাকালীন জাতীয় কোষাগার থেকে শৌচালয়ের জিনিসপত্র ও চায়ের খরচ দেওয়ার অভ্যেস বন্ধ করেন। বিদেশসফরে কোনও সাংসদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্য গেলে তাঁকেই তাঁর খরচ বহন করতে হবে বলে সওয়াল করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
জীবনে নানা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখিও পড়তে হয়েছে প্রবীণ এই সাংসদকে। ইউপিএ জোট থেকে বামেরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিতে অস্বীকার করেন সোমনাথ। অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চাননি তিনি। তারই ফলস্বরূপ ২০০৮ সালে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিএম।
তিনি সিপিএমের এই পদক্ষেপে বলেছিলেন, দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিনগুলির মধ্যে একটা। এই ঘটনার পরের বছরই সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরও চরম ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছিল সিপিএমের অন্দরে। কী অবস্থান নেবে সিপিএম, তা নিয়েই যখন ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছিল, তখন বঙ্গ সিপিএম পার্টির পতাকা দিয়ে মুড়ে দিতে চেয়েছিল প্রাক্তন সাংসদের দেহ। মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছিল রাজ্য কমিটির বৈঠক। লাল সেলাম জানাতে চেয়েছিল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। প্রত্যেকেই উপস্থিত হয়ে ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও সোমনাথের মরদেহে লাল পার্টির কোনও চিহ্ন রাখতে দেননি সোমনাথ-জায়া রেণু চট্টোপাধ্যায় বা সোমনাথ কন্যা অনুশীলা বসু।
কেন্দ্রীয় সিপিএমের তরফে কোনও বার্তা আসেনি তখনও। অবশেষে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর দলের তরফে শোক-বার্তা দেওয়া হয়। সেই শোকবার্তা লেখা ছিল উল্লেখও করা হয়নি তিনি সিপিএমের সদস্য ছিলেন। বিতর্ক ঢাকতে রাজ্য কমিটি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বলে উল্লেখ করল ভিন্ন এক শোকবার্তায়।
বর্ষীয়ান এই নেতাকে ব্রাত্য করে দিয়েছিল নিজের দলই।