বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

অবাঙালি হয়ে গেলেন হাওড়ার রামঠাকুর, ক্ষোভ

July 29, 2020 | 2 min read

হাওড়ার রামরাজাতলা। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ইতিহাস। প্রায় আড়াইশো বছর আগে স্থানীয় জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী এখানে রামপূজা চালু করেন। শোনা যায়, স্বপ্নাদেশ পেয়েই শুরু হয় এই উদ্যোগ।

ইতিহাস বলে, রামমন্দির তৈরির আগে ওই অঞ্চলে মূল আরাধনা ছিল সরস্বতীর। বিস্তর মতানৈক্য পেরিয়ে, সরস্বতীর উপাসক ও রামোপাসকদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়। সেই থেকে রামপূজা অন্যতম উৎসব হয়ে ধরা দেয় সেখানে। উৎসবই বটে। এমনই প্রভাব, যে অঞ্চলটির নামই হয়ে গেল রামের নামে। ‘রামরাজাতলা’।

এখনও প্রতিবছর রামনবমীর দিন থেকে শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত মেলা চলে। পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম মেলা এই রামরাজাতলাকে ঘিরেই। তারপর, বিসর্জন দেওয়া হয় সেই মূর্তির। প্রতিবছর এই চারমাস ভক্তরা দেখতে পান রাম-কে।

এই রামরাজাতলায় ‘শ্রীরাম’ কিংবা ‘রামচন্দ্র’ পূজিত হন না। পুজো হয় রাম ঠাকুরওর। এ যেন রামের বাঙালি হয়ে ওঠা। সে-কারণেই দেখা যেত, গোঁফ আছে তাঁর। আমরা ক্লিন-শেভড ছবি বা মূর্তি দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু বাঙালি যেমন শিবের পেটে নোয়াপাতি ভুঁড়ি বসিয়েছে, ঠিক তেমনি রামকেও দিয়েছে গোঁফ। ঘরের লোক না হলে কি হয় এমন!

রামরাজার মন্দিরে যে মূর্তিটি ছিল রাম-সীতার, সেটি তো প্রতিবছর বিসর্জিত হয়, আবার বানানোও হয়। তিনশো বছর ধরে চলে আসছে এমনই। কিন্তু সম্প্রতি সেই প্রাচীন মন্দিরের উল্টোদিকের ভূমিতে পুকুর বুজিয়ে নির্মিত হয়েছে আরও একটি মন্দির। সেখানে পাথরের রাম-সীতা বিরাজমান থাকবেন সারাবছর।

কেন এই নতুন মন্দির তৈরি করতে হল? যুক্তি – যাতে সারাবছরই রাম-সীতার দর্শন পাওয়া যায়, সে-কারণেই এমন উদ্যোগ। দর্শনার্থীরা উৎসবের চারমাস সনাতন মূর্তি দেখবেন, আর বাকি সময়টুকু উল্টোদিকের মন্দিরের নবকলেবরটিকে। অদ্ভুত যুক্তি, সন্দেহ নেই!

আশ্চর্য লাগে, এতদিনের ঐতিহ্যের ছিটেফোঁটাও নেই নতুন মন্দিরে। বদলে গেছে রাম-সীতার গাত্রবর্ণ। মুখাবয়বে বাঙালিয়ানার ছিটেফোঁটা নেই একটুও। বরং অবাঙালি মহল্লায় পূজিত রামের সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া যায় নতুন মন্দিরের চেহারার। শুধু তাই নয়, প্রাচীন মন্দিরে রাম-সীতার সঙ্গে লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, বিভীষণ, ব্রহ্মা, শিব, সরস্বতী প্রমুখের যে মূর্তি ছিল, উধাও তাঁরাও। কিংবা ছড়িয়ে গিয়েছেন একাধিক কুঠুরিতে। হ্যাঁ, তাঁদের মুখাবয়বেও অবাঙালি ছাপ স্পষ্ট।

‘হিন্দুস্তানি’ সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে গেল বাংলার রামঠাকুর। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটিজেনদের একাংশ। বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কতটা সুরক্ষিত ভবিষ্যতে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#ramrajatala mandir, #Lord Rama

আরো দেখুন