ঝুলন আর দোলযাত্রার তফাৎ জানেন কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ যাত্রার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, কিন্তু আমরা সবগুলো পালন করি না। কিছু কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য যাত্রানুষ্ঠান নিয়মিতভাবেই অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়, যেমন- রথযাত্রা, রাসযাত্রা, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা, ঝুলনযাত্রা ইত্যাদি।
শাস্ত্রকাররা এসব যাত্রাগুলোকে বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত ও তত্বসমৃদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। অনাদি কাল থেকেই শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ রূপে মন্দিরে দেবালয়ে, ভক্তের গৃহে স্থায়ীভাবে পূজিত হয়ে আসছেন।
শ্রাবণ মাসে অমাবস্যার পর একাদশী থেকে পূর্ণিমা, এই পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব ঝুলন। শ্রাবণী পূর্ণিমাকে একাধারে ঝুলন পূর্ণিমা বা রাখি পূর্ণিমাও বলে। বৈষ্ণব ধর্ম সজীবতার ধর্ম, রসের ধর্ম। এই ধর্ম শুষ্কতার পক্ষপাতী নয়। তাই এই ধর্ম আমাদের জীবনের ভোগ বা কর্মকে ভোগরস, কর্মরস না বলে ভক্তিভরে তাকে ভক্তিরস বলেছে। জীবনকে শুষ্ক মরুভুমি করে পরমতত্ত্ব লাভে ভক্তিবাদীরা বিশ্বাসী নন। বৈষ্ণব ধর্ম তাই জীবনময়, প্রেমময় ও রসময়।
উপনিষদ ভগবান বা পরমব্রহ্মকে রসস্বরূপ বলে উপলব্ধি করেছে। ভগবানকে তাঁর সৃষ্টি ও তা রক্ষার জন্য অবতারত্ব গ্রহণ করতে হয়। অবতার রূপে তাঁর নানারূপ কাজকে যাত্রা বা লীলা নামে অভিহিত করা হয়। ঝুলনযাত্রা তেমনই এক লীলার নাম, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার মাধুর্যপূর্ণ প্রেমের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে।
রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহ দোলনা বা ঝুলনায় স্থাপন করে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে দোলান হয়। এখানে প্রতীকী হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন-পরা প্রকৃতি বা পুরুষোত্তম আর রাধারাণী হচ্ছেন-অপরা প্রকৃতি ভক্ত স্বরূপিনী। সুক্ষ্ম অর্থে ভক্ত ভগবানের খেলা।
প্রশ্ন জাগতে পারে দোলায় রাধা গোবিন্দের বিগ্রহ স্থাপন করে পূর্ব-পশ্চিম দিক দিয়ে ঝোলানোর তাৎপর্য কী? এ বিষয়ে, শাস্ত্রীয়, ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে দোলনাটি দোলানো হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে। সূর্যের উদয় অস্ত ও অবস্থানের দিক নির্দিষ্ট করেই তা করা হয়।
সূর্য হচ্ছে পৃথিবীতে সর্ব প্রকার শক্তির উৎস। আর পৃথিবীর গতি হচ্ছে-দু’টো, আহ্নিকগতি ও বার্ষিক গতি। দুই গতিধারায় বছরে দু-বার কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখায় গিয়ে অবস্থান করে। তখন ঘটে সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন অবস্থান। সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা অনুষ্ঠানে দোলনাটিকে ঝোলানো হয় উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে।