দেশ বিভাগে ফিরে যান

ফের প্যাংগং লেকের ধারে বিরাট সেনাসমাবেশ চিনের!

August 1, 2020 | 2 min read

ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে চিন সেনা প্রত্যাহারে রাজি হলেও, কার্যক্ষেত্রে উলটো পথেই হাঁটছে লালফৌজ। সেনা প্রত্যাহার দূর অস্ত, উলটে প্যাংগং লেকের সেই সংঘাত অঞ্চলে সেনাসমাবেশ করে শক্তি বাড়াচ্ছে লালাফৌজ। সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রে সে ছবি ধরা পড়েছে। ছবি বিশ্লেষণে এটা পরিষ্কার, প্যাংগং লেকে অতিরিক্ত নৌকো এনেছে লালফৌজ। চিনাসেনার মাথাগোঁজার ব্যবস্থা করতে নতুন নির্মাণকাজও হয়েছে। লালফৌজের একাধিক তাঁবু, নতুন করে কাটা পরিখাও উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে।

সর্বশেষ ২৯ জুলাইয়ের যে স্যাটেলাইট চিত্র, তা বিশ্লেষণ করে সর্বভারতীয় একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দাবি করে, চিনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি (PLA) গ্রাউন্ড ফোর্সেস নেভাল উইংয়ের ১৩টি নৌকো ফিঙ্গার ৫ এবং ফিঙ্গার ৬-এ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে ফিঙ্গার পাঁচে তিনটি এবং ফিঙ্গার ছয়ে ১০টি নৌকো। এক একটি নৌকোয় কমপক্ষে ১০ জন করে সেনা রয়েছে। অর্থাত্‍‌ ১৩টি নৌকোয় চিনের এলিট ফোর্সের কমপক্ষে ১৩০ জন সেনা মোতায়েন রয়েছে। জায়গাটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিঙ্গার চারের খুব কাছেই।

২৯ জুলাইয়ের উপগ্রহ চিত্রে PLA-র স্থলবাহিনীর গড়ে তোলা নৌঘাঁটি স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। চিনাসেনা যে প্যাংগং লেকে শক্তি বাড়িয়েছে, এই ছবি দেখার পর তা অস্বীকারের উপায় নেই। কারণ, এর আগে ১৫ জুনের যে উপগ্রহ চিত্র পাওয়া গিয়েছিল, তাতে ফিঙ্গার ছয়ে PLA-র আটটি নৌকো ধরা পড়ে। সমর বিশেষজ্ঞদের মতে, প্যাংগং লেকে চিনের এই অতিরিক্ত নৌকার উপস্থিতি উদ্বেগজনক শুধু নয়। চিনের আক্রমণাত্মক মানসিকতার ইঙ্গিতবাহী।

লাদাখের অভিযানের দায়িত্বে থাকা উত্তর সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিএস হুদা বলেন, প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার ৫ ও ৬-এ চিনাসেনার আগে কোনও জেটি ছিল না। ফিঙ্গার আটের বাইরে লালফৌজ জেটি ব্যবহার করত। কিন্তু, বর্তমানে ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থায়ী ভাবে উপস্থিতি বাড়াচ্ছে লালফৌজ। তিনি জানান, ফিঙ্গার পাঁচে তিনটে ভাসমান অস্থায়ী জেটি চোখে পড়েছে। ওই তিনটি জেটিতে কমপক্ষে ৬টি নৌকো নোঙর করা যেতে পারে।

২৯ জুলাইয়ের উপগ্রহ চিত্র অনুযায়ী, ফিঙ্গার পাঁচে অন্তত ৪০টি কুঁড়েঘরের মতো বানিয়ে রাখা আছে। এ ছাড়া ১৫টি তাঁবুও সেখানে খাটানো হয়েছে। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরও চারটি তাঁবু সেখানে রয়েছে। ধারণা, নৌকোয় থাকা চিনাসেনাদের জন্যই ওই তাঁবু।

সেনাদের রাখার জন্য এক-একটি কুঁড়েঘর বা চালাঘর এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে প্রচণ্ড শীতেও না সমস্যায় পড়তে হয়। এই এক-একটি ঘরে কমপক্ষে ১২ জন করে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, এই ঘর হিসেব করলেই আন্দাজ পাওয়া যায় কমপক্ষে ৪৮০ জন চিনাসেনা সেখানে মোতায়েন রয়েছে। তার পর, নৌকোয় ও তাঁবুতে থাকা সেনাদের হিসেবে ধরলে, সৈন্যসমাহার অনেকটাই বাড়িয়েছে পিএলএ।

লাদাখে প্যাংগং লেকের ধারে আটটি পরপর সরু সরু অঞ্চল রয়েছে। এগুলি ফিংগার (Fingers Region) নামে পরিচিত। তার মধ্যে ফিংগার ৪ অঞ্চলে চিনা আগ্রাসন রুখতে গিয়ে লালফৌজের সঙ্গে সংঘাত বেধেছিল ভারতীয় সেনা জওয়ানদের।

ফিংগার রিজিয়নের আটটি ফিংগার ভারতের অন্তর্গত বলে বরাবরই দাবি করে এসেছে নয়াদিল্লি। এই আট ফিংগার যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানেই ভারত-চিন সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা। তবে এই বিষয়ে চিনের দাবি কিছুটা আলাদা। চিনের মতে, চার নম্বর ফিংগার পর্যন্ত ভারতের এলাকা এবং বাকি চারটি ফিংগার চিন সীমান্তের মধ্যে পড়ছে। এই বছরের মে মাসে আট নম্বর ফিংগারের দিকে টহল দিতে যাওয়ার পথে ভারতীয় বাহিনীর পথ আটকেছিল চিনা সেনা। ভারতীয় জওয়ানরা এর প্রতিবাদ করায় দুতরফে সংঘর্ষ বেধেছিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#indo china conflict

আরো দেখুন