বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

হল খুললে দর্শক ফিরবেন তো? চিন্তায় টলিপাড়া

August 28, 2020 | 3 min read

সেপ্টেম্বর মাসেই নাকি সিনেমা হল খুলে যেতে পারে বলে টলিপাড়ায় গুঞ্জন। হল খুললে কী কী বাংলা ছবি মুক্তি পাবে? তাছাড়া হল খুললেও দর্শক কি আসবেন? উঠছে একাধিক প্রশ্নও। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে সেই উত্তরই দেওয়ার চেষ্টা করলেন অভিনন্দন দত্ত।

দরজায় কড়া নাড়ছে ‘আনলক ৪’। তারই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, এবার মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। খুলতে পারে সিনেমা হলও। গত রবিবার কেন্দ্রীয় সরকার সিনেমা ও টিভির ক্ষেত্রে শ্যুটিংয়ের অনুমতি দিয়েছে। এই মুহূর্তে টলি পাড়ার একাধিক প্রযোজনা সংস্থার বহু ছবির কাজ শেষ পর্যায়ে। সামনেই দুর্গাপুজো। সিনেমা হল খুলে যাওয়ার পক্ষে সকলেই। কিন্তু সামনের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে সিনেমা হল খুললে আদৌ দর্শক সমাগম হবে কিনা, প্রযোজক ও পরিচালকদের কাছে এখন সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন। প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর এখন তিনটে ছবি মোটামুটি তৈরি। কাকাবাবু সিরিজের নতুন ছবি দুর্গাপুজোয় মুক্তি পাওয়ার কথা। আর রয়েছে মিমি চক্রবর্তী ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত ‘ড্রাকুলা স্যার’ এবং পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘প্রেম টেম’। তবে সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, সেপ্টেম্বরে সিনেমা হল খুললে তারা এর মধ্যে হয়তো একটাই ছবি রিলিজ করবে। বাকিটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। সুরিন্দর ফিল্মসেরও প্রায় একই অবস্থা। ‘রক্তরহস্য’, ‘টেনিদা অ্যান্ড কোম্পানি’ এবং ‘বনি’র কাজ প্রায় শেষ। সংস্থার কর্ণধার নিসপাল সিং রানে বললেন, ‘এখনও পর্যন্ত কিছু ভাবিনি। আমাদের বেশ কিছু ছবি তৈরি রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত জেনে তারপর আমরা সেইমতো ছবি মুক্তির পরিকল্পনা করব।’

লকডাউনের জন্যই দেবের প্রযোজনা সংস্থার ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ ছবিটার মুক্তি আটকে গিয়েছিল। কিন্তু এই ছবি এত তাড়াহুড়ো করে মুক্তি পাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় স্বয়ং পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘এত বড় বাজেটের একটা ছবি তাড়াহুড়ো করে রিলিজ হয়তো করবে না। দেবও হয়তো সেটা চাইবে না। ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কিছু কাজ এখনও বাকি। তার থেকেও বড় কথা সিনেমা হল খুললে মানুষ আসবেন কিনা সেটা তো আগে দেখতে হবে। তারপর বাকি সিদ্ধান্ত।’ দেব অভিনীত ‘টনিক’-এর মুক্তি পিছিয়ে যে বড়দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে তা এদিন আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন ছবির প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী। জিতের ‘বাজি’র শ্যুটিং এখনও বাকি। অন্যদিকে তাঁর প্রযোজনা সংস্থার তরফে আবির চট্টোপাধ্যায় ও রুক্মিণী মৈত্র অভিনীত ‘সুইজারল্যান্ড’ ছবিটি তৈরি। কিন্তু এই ছবি এখনই মুক্তি পাবে কিনা তা প্রযোজনা সংস্থা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। কারণ, সকলেই জল মেপে এগিয়ে চলার পক্ষপাতী।

সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহানের দুটো ছবির কাজ প্রায় শেষ। সিনেমা হল খোলা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘খুব অনিশ্চিত একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। এতগুলো ছবি থমকে গিয়েছে। বহু মানুষের পারিশ্রমিক আটকে রয়েছে। তাই আমি সুরক্ষাবিধি মেনে সিনেমা হল খোলার পক্ষে। বাকিটা দর্শকের হাতে।’ নিজের নতুন ছবি প্রসঙ্গে নুসরতের বক্তব্য, ‘ডিকশনারির আর এক দিনের শ্যুটিং বাকি। এসওএস কলকাতা ছবিটা মুক্তি পাবে পুজোয়। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমরা একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।’

দেবকে নিয়ে পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গোলন্দাজ’ ছবিটি স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের জন্য ছবির শ্যুটিং অনেকটাই বাকি। ‘সিনেমা হল খোলার পর গত সপ্তাহে চীনে মুক্তি পাওয়া একটা ছবি দারুণ ব্যবসা করেছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, মানুষ ভীষণভাবে সিনেমা হলে ফিরতে চাইছেন। আসলে ছবি যদি ভালো হয় তাহলে মানুষ ঠিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন বলে আমার বিশ্বাস,’ মত ধ্রুবর। সিনেমা হল খুললে প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ-এর অন্যতম কর্ণধার শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিটিই আবার প্রেক্ষাগৃহে রি-রিলিজ করতে চাইছেন। ‘তবে বেলাশুরু এখনই আমি রিলিজ করতে চাইছি না। বাকিটা পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব,’ বক্তব্য তাঁর।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে সিনেমা হল খুললে অনেকেই মনে করছেন বাংলায় অক্টোবর মাস থেকে ছবি মুক্তির সংখ্যাটা বাড়তে পারে। আবার হল খোলার আগে রক্ষণাবেক্ষণের উপরে কেউ কেউ জোর দিতে চাইছেন। বিজলি, মিনার ও ছবিঘর সিনেমা হলের কর্ণধার সুরঞ্জন পালের যুক্তি, ‘সিনেমা হল খোলা মানে বড় খরচ। অনেকেই এখন সিঙ্গল স্ক্রিনকে ডাবল স্ক্রিন করতে চাইছেন। কেউ আবার আসন সংখ্যা কমাতে চাইছেন। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরকার যদি একটা পরিষ্কার গাইডলাইন দিয়ে আগে হল মেরামতির অনুমতি দেন, তাহলে খুব ভালো হয়।’ ইম্পার তরফে পিয়া সেনগুপ্ত বললেন, ‘অবস্থা খারাপ ছিলই। এবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। অবিলম্বে হল খোলা উচিত। এখন নতুন নতুন ছবি রিলিজ করলে সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো টিকে থাকতে পারবে।’ এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আগামী মাসের শুরুতেই সিঙ্গল স্ক্রিন হলের কর্মীদের অর্থ সাহায্যের কথাও জানালেন পিয়া।

বক্তব্য পরিষ্কার— বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে সচল রাখতে সিনেমা হল খুলতেই হবে। আজকে সিনেমা শিল্পের প্রয়োজন দর্শকের সমর্থন। কিন্তু তার আগে প্রয়োজন সরকারি নির্দেশের। প্রয়োজন গাইডলাইনের। তাই শারদোৎসবের আগে সুখবরের আশায় দিন গুনছে গোটা টলিপাড়া।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Tollywood, #Coronavirus, #Cinema halls

আরো দেখুন