সার্বিক সফল মাসের শেষ লকডাউন
আনলক-৪ শুরুর আগে সোমবার ছিল রাজ্যে শেষ সম্পূর্ণ লকডাউন। তাই গোটা রাজ্যের পাশাপাশি শহর কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দোকানপাট, অফিস-কাছারি সমস্তটাই এদিন ছিল বন্ধ। গণপরিবহণ মাধ্যমগুলি না থাকায় রাস্তাঘাটও ছিল কার্যত শুনশান। তবে, সর্বত্রই রাস্তায় জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়ি অনেক বেশি ছিল। অন্যদিকে, পুলিস-প্রশাসনের সক্রিয়তাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রশাসনের নজরদারি জোরদার হলেও ফের চিন্তা বাড়িয়েছে একাংশ শহরবাসীর উদাসীনতা। এদিনও শহরে বিভিন্ন অলিগলিতে দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। সেখানে মাস্ক না পরা ক্রেতার সংখ্যাও ছিল যথেষ্ট। খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান চালিয়ে পুলিস বেশ কিছু দোকান বন্ধ করে দেয়। নজরদারি চালাতে এদিন কলকাতা পুলিসের তরফে বিভিন্ন এলাকায় ড্রোনও ওড়ানো হয়। পাশাপাশি, শহরের সমস্ত ছোট-বড় মোড়গুলিতে কড়া নাকা চেকিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া, পাটুলি, যাদবপুর, গোলপার্ক, গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, এক্সাইড মোড়, হাজরা, রাসবিহারি ক্রসিং সর্বত্রই পুলিসি তৎপরতা চোখে পড়েছে।
উত্তর ও মধ্য কলকাতার ছবিটাও ছিল একই। সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ক্রসিংয়েই পুলিসের ব্যারিকেড ছিল। ধর্মতলা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গার্ড রেল দিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়েছিল। চারচাকা গাড়ি বা টু হুইলার থামিয়ে পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ করছে— লকডাউনের এই পরিচিত দৃশ্য এদিনও দেখা গিয়েছে। তবে, দোকান-বাজারের ঝাঁপ না খুললেও এদিন হেদুয়ার কাছে সুফল বাংলার অস্থায়ী স্টল থেকে সব্জি বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, লকডাউনের জেরে গোটা শহর থমকে গেলেও একমাত্র কর্মচঞ্চল ছিল কুমোরটুলি। দুর্গাপ্রতিমার পাশাপাশি এখন সেখানে তৈরি হচ্ছে বিশ্বকর্মার মূর্তিও। প্রবীণ মৃৎশিল্পী কালীচরণ পাল জানালেন, গ্রাম থেকে কিছু কারিগর চলে এসেছেন। তাঁদের নিয়েই কাজ শুরু হয়েছে। লকডাউনের কারণে এদিন বন্ধ ছিল উত্তর কলকাতার বিখ্যাত মন্দিরও। ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে কয়েকজন পুরোহিতের দেখা মিললেও, মন্দিরে ঢোকার মূল গেট সারাদিন বন্ধই ছিল।
গোটা দিন ঘরবন্দি থেকে লকডাউন সফল করলেন উত্তরবঙ্গবাসীও। এদিন কোচবিহারে যাঁরা বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের একাংশের করোনার অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির রাস্তাঘাট, বাজার, মার্কেট কমপ্লেক্স দিনভরই ছিল শুনশান। শিলিগুড়ির হাসমিচক, পানিট্যাঙ্কি মোড়, জংশন সহ কয়েকটি জায়গায় পুলিস ব্যারিকেড বসিয়েছিল। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীদের দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় পুলিসকে। তবে, গ্রামে-গঞ্জে এদিন অনেককে রাস্তার ধারে নয়ানজুলিতে মাছ মারতে দেখা যায়।
গৌড়বঙ্গেও মোটামুটি একই ছবি ধরা পড়েছে। সকাল থেকে রাস্তায় টহলদারি ছিল পুলিসের। বিভিন্ন বাজারে অভিযানও চালানো হয়। মালদহে এদিন দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে লকডাউন বিধি ভঙ্গ করার অভিযোগে শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুরেও একাধিক ব্যক্তি আটক হয়েছেন।
বাদ যায়নি দক্ষিণবঙ্গও। সেখানেও এদিন ব্যাপক পুলিসি ধরপাকড় চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪ জন, বাঁকুড়ায় ৩০ জন, পশ্চিম বর্ধমানে ৬৪ জন এবং নদীয়ায় ৬৮ জনকে লকডাউনের বিধি ভাঙার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। বীরভূমেও বেশ কয়েকজনকে একই অপরাধে আটক করা হয় বলে জানা গিয়েছে।