৩ বছরে লাফিয়ে বেড়েছে ২০০, ৫০০ টাকার জাল নোট- আরবিআই
জাল নোটের কারবার দেশজুড়ে বাড়ছে। পুলিস ও একাধিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির তরফে এমনই তথ্য মিলছে। এবার সেই দাবিগুলিকে সিলমোহর দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। তারা বলছে, গত এক বছরে লাগামছাড়া হয়েছে জালনোটের কারবার। সেই তালিকায় সবার উপরে আছে ২০০ এবং ৫০০ টাকার নোট। গত তিন বছরের তুল্যমূল্য হিসেবে প্রতিবারই লাফিয়ে বেড়েছে জাল নোটের সংখ্যা।
জাল নোটের কারবার ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে পুরনো ৫০০ টাকা এবং এক হাজার টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন। সেই সিদ্ধান্তের পিছনে যুক্তি দেওয়া হয়, দেশবিরোধী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে জাল নোট। তাতে দেশের সুরক্ষা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ছে। দেশবাসীর নিরাপত্তার খাতিরেই নোট বাতিল করা দরকার, যুক্তি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর সেই সিদ্ধান্তের দাম চোকাতে হয় গোটা দেশকে। ধাক্কা খায় ব্যবসা। আয় কমে মানুষের। মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। এমনকী নোটবন্দি প্রাণ কেড়েছে একাধিক মানুষেরও। প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও, নোট বাতিলের ঘা এখনও শুকোয়নি। আবার কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তে বিরাট অঙ্কের জাল নোট ধরা পড়েছে, এমন তথ্যও সামনে আনতে পারেনি সরকার। এই পরিস্থিতিতে জাল নোট নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পেশ করা তথ্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
কী বলছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক? তারা জানাচ্ছে, গত আর্থিক বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-’২০ সালে দেশে মোট জাল নোট ধরা পড়েছে ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে ১০০ টাকার জাল নোটের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এই সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৭৩৯। এরপর রয়েছে ৫০ টাকার জাল নোট। এই অঙ্কের বাজেয়াপ্ত জাল নোটের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৫৪। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গত তিন বছরের তথ্য বলছে, জাল নোট বৃদ্ধির হারে সবার আগে আছে ২০০ টাকা। ২০১৮-’১৯ অথবর্ষের তুলনায় বৃদ্ধির হার ১৫১.২ শতাংশ। গত অর্থবর্ষে ৩১ হাজার ৯৬৯টি ২০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে। বৃদ্ধির নিরিখে পিছিয়ে নেই ৫০০ টাকার নকল নোটও। ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ৫০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে ৩০ হাজার ৫৪টি। তার আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার ৩৭.৫ শতাংশ। তবে তিন বছরের হিসেবে ২০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার জাল নোটের ধারেকাছে নেই অন্য কোনও নোট। অথচ গত অর্থবর্ষে কমেছে দু’হাজার টাকার নকল নোটের কারবার। যেখানে ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে দেশে নকল দু’হাজার টাকার নোট ধরা পড়েছিল ২১ হাজার ৮৪৭টি, সেখানে গত আর্থিক বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২০টি। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, গত অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’হাজার টাকার নোট ছাপানো পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জাল নোট ছাপানোর কারবারে সুবিধা হবে না দেখে, তাতে সামান্য রাশ টেনেছে দুষ্কৃতীরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কারণ, এই জাল নোটগুলি হয় কোনও ব্যাঙ্কের শাখায় ধরা পড়েছে, অথবা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাউন্টারে, যেখান থেকে নোট বদল হয়, সেখানে ধরা পড়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে যে নকল নোট ছড়িয়ে আছে, তার সম্পূর্ণ হদিশ পাওয়া সত্যিই কঠিন। আসলে নোটবাতিল যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, তাতে কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আরবিআইয়ের এই পরিসংখ্যান, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।