হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

সেলুলার জেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হল শতাধিক বাঙালি বিপ্লবীর নামাঙ্কিত ফলক 

September 11, 2020 | 2 min read

সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকেই আন্দামান দ্বীপকে বন্দিশালা হিসেবেই ব্যবহার করত ব্রিটিশরা। ১৮৯৬ সালে এই জেল নির্মাণের কাজ শুরু হয় পাকাপাকিভাবে। সেই সময় ব্রিটিশদের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়া বহু বিপ্লবীকে ‘কালাপানি’ তে দ্বীপান্তরিত করা হত। তাদের নামাঙ্কিত পাথর ফলক বসানো হয়েছিল এই জেলে। সম্প্রতি দেখা গেছে সেখান থেকে হাপিস বহু ফলক।

এক ফেসবুক ব্যবহারকারী, দীপক রায়, সম্প্রতি ফেসবুকে সেলুলার জেলের নয়া তালিকার ছবি তুলে পোস্ট করেন। তাঁর ছবিতে দেখা যাচ্ছে নতুন ফলকগুলিতে মাত্র ৫১৩ জন বিপ্লবীর নাম আছে। তাঁর মন্তব্যেই জানা যায় এই নতুন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে চার শতাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম। এই তালিকা প্রকাশ্যে আসার পরেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ভদ্রলোকের বক্তব্য, “এখনও অবধি নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে সংখ্যা যে কমেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কারণ রমেশচন্দ্র মজুমদারের বইতে পড়েছি সেখানে ৯৬৬ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামের তালিকা ছিল। সেই তালিকাও আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছি। তবে এই বদলে কাদের নাম বাদ দেওয়া হল, সেটা নিয়ে আরও অনুসন্ধান প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, তালিকা থেকে বাদ পড়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অধিকাংশই বাঙালি হওয়ার সম্ভাবনা। সারা ভারত থেকেই সেলুলার জেলে সংগ্রামীদের যে বন্দি করা হলেও কিন্তু বাংলা, বিহার এবং আন্দামানের বিচারব্যবস্থা অনেকটা বেশি করেই নির্ভরশীল ছিল কলকাতা হাইকোর্টের ওপরে। ফলে বাঙালিদের এই জেলে দ্বীপান্তর করার প্রবণতাও সেই সূত্রেই বেশি থেকেই যায়।

তিনি এও বলেন, “রমেশ মজুমদারের বইয়ের তালিকার পুরো পর্যালোচনা না করে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে আপাতভাবে প্রায় ছ’শো-সাতশো’র মত বাঙালি বিপ্লবীদের নাম ছিল। সেটাই এখন দাঁড়িয়েছে ৩৮৪ জনে। ফলে বাঙালিদের নাম যে বাদ গেছে বেশি তা বলাই বাহুল্য। তবে পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যের বিপ্লবীদের নাম বাদ যাওয়ারও সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।”

এছাড়া পুরনো তালিকায় প্রতি বিপ্লবীদের নামের পাশে উল্লেখিত ছিল তাঁরা কত সালে এই জেলে বন্দি হয়ে এসেছিলেন। নতুন তালিকায় এই ধরণের কোনো উল্লেখ নেই। বরং ১৯০৯-১৯২১, ১৯২২-১৯৩১ এবং ১৯৩২-১৯৩৮ সাল; এই তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে পুরো স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়সীমাকে। বাদ গেছে ১৯০৯ সালের আগের বিপ্লবীদের নামও।

২০১৫ সালেই এই সেলুলার জেলের পুনর্নবীকরণের কাজ হয়। সেলুলার জেলের নামকরণ করা হয় দামোদর সাভারকারের নামে। আনুমানিক ২০১৫ সাল বা তার আগেই আগেই এই বদল ঘটেছে। কারণ ঐতিহাসিক ও লেখক হামাদি সুবানির এই বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালে। অর্থাৎ সেই সময়ে কিংবা তার আগেই হয়েছে এই পরিবর্তন। তবে এতগুলো বছর তা চোখ এড়িয়ে গেল কীভাবে, সন্দেহ থেকে যাচ্ছে সে ব্যাপারেই।

লক্ষ্য করার মত বিষয় হল বদল হওয়া নতুন তালিকাতে প্রথমেই রয়েছে দামোদর সাভারকারের নাম। রমেশ মজুমদারের বইয়ে বিবরণ থেকেই উঠে আসে পুরনো তালিকাটি সাজানো হয়েছিল নামের আদ্যাক্ষর দিয়েই। সেক্ষেত্রে দামোদর সাভারকারের নাম তালিকার প্রথমে তুলে আনা হল কেন, সে বিষয়েও কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমবয়সীদের কাছে মুচলেকা দেওয়া সাভারকারকে মহান সাজাতেই কি এই উদ্যোগ? নাকি চিরাচরিত হিন্দি আগ্রাসন? বাঙালীকে যোগ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে ইতিহাস ব বিকৃত করার প্রথা তো ১৯৪৭ সাল থেকেই বিদ্যমান। যদি সত্যিই ইচ্ছাকৃত এটা করা হয়ে থাকে, বাঙালিরা কি প্রতিবাদে দলবদ্ধ হবেন? নাকি অন্য অনেক বিতর্কের মতোই ধামাচাপা পড়ে যাবে এভাবেই? 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Andaman Cellular Jail, #Bengali Freedom Fighters

আরো দেখুন