অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য পাঠকের কাছে অমর কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষে বাংলা উপন্যাস তুমুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর জনপ্রিয়তম উপন্যাসিক হয়ে ওঠেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সমকালীন সময়ে ব্রাহ্মণ শাসিত এবং জমিদার শাসিত বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ কেমন ছিলেন তার নিখুঁত বর্ণনা আমরা তাঁর লেখায় খুঁজে পাই।
সমাজের সাধারণ মানুষই তাঁর রচনার নায়ক-নায়িকা। তাঁর অনুসন্ধানী দৃষ্টি আমাদের আজও বারবার আকর্ষণ করে। নারী চরিত্র নির্মাণে তিনি যে নির্মাণশৈলীর পরিচয় দিয়েছেন তা স্মরণীয়। প্রেমের বিশ্লেষণ, আচার-আচরণের বর্ণনা তাঁর রচনায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এখানেই তাঁর বিশেষত্ব।
শরৎচন্দ্রের সমস্ত উপন্যাস ও ছোট গল্পগুলোকে প্রধানত পারিবারিক, সামাজিক ও মনস্তত্ত্বমূলক- এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করলেও তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসের কেন্দ্রভূমিতে বিরাজমান রয়েছে বাঙালীর সমাজ সম্পর্কে এক বিরাট জিজ্ঞাসা এবং বাঙালীর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ জীবনের রূপায়ণ।
সমাজের বাস্তব অবস্থা, নর-নারীর জীবনভঙ্গিমা ও জীবনবোধকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদের মানসলোকে যে সূক্ষè জটিল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে-শরৎসাহিত্যে আমরা তারই সার্থক রূপায়ণ দেখতে পাই। বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের দুঃখ-বেদনার এতবড় কাব্যকার ইতোপূর্বে দেখিনি আমরা।
মূঢ়তায় আচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থার নিষ্ঠুর শাসনে লাঞ্ছিত নর-নারীর অশ্রুসিক্ত জীবনকথা অবলম্বন করে মানবদরদী শরৎচন্দ্র গদ্যবাহিত যে কতগুলো উৎকৃষ্ট ট্র্র্যাজেডি রচনা করেছেন তাতে বাংলা সমাজের বহুচিত্রিত এক আলেখ্য উন্মোচিত হয়েছে আমাদের সামনে। মূলত তিনি আধুনিক পাশ্চাত্য সাহিত্যের যে মানবতাবাদের মূল সুর তারই রূপায়ণ ঘটিয়েছেন তাঁর গল্প-উপন্যাসে।
শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলোর মধ্যে প্রেম, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা, গ্রামীণ জীবনের সমস্যাবলি, পারিবারিক জীবন, সর্বোপরি ব্রাহ্মণ শাসিত এবং জমিদার শাসিত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মনো-দৈহিক চিত্রের নিখুঁত বর্ণনা আমরা দেখতে পাই। এ ছাড়াও প্রেম, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, ধর্ম সংস্কার প্রভৃতির ওপর লেখক প্রশ্ন তুলেছেন।