দেশ বিভাগে ফিরে যান

হাতরাস আড়ালে মরিয়া যোগী সরকার, এখনো বন্দি পরিবার

October 3, 2020 | 2 min read

সামনে আদিগন্ত ধানখেত। তার পাশেই একটি উঁচু ঢিবির মতো জমিতে বাড়ি। অবশ্য বাড়ি মানে আদতে দু’টি ঘর, আর সিমেন্ট নির্মিত একটি দেওয়াল। খোলা উঠোনে একটা চারপাই। অনেক পুরনো দু’টি কাঠের চেয়ার। ওই চারপাই আর চেয়ারে আপাতত মাঝেমধ্যে এসে বসে থাকেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও থানার ইনচার্জ। কিছুক্ষণ থেকে তাঁরা চলে যান। তাঁরা সাধারণত বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে একই কথা বলেন। মিডিয়া কিংবা বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলা চলবে না। মাঝেমধ্যেই ঘরের মধ্যে ঢুকে আসছে পুলিস। চেক করতে যে, কেউ লুকিয়ে মোবাইলে কথা বলছে কি না। সতর্কতা বাবদ দু’টি মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়েছে। গোটা বাড়িকে ঘিরে রেখেছে আর্মড ফোর্সের জওয়ানরা। হাইওয়েতে যেভাবে ব্যারিকেড দেওয়া হয়, তেমনই গার্ডরেল দিয়ে বাড়িকে পরিণত করা হয়েছে দুর্গে। প্রতিবেশীদের আসা নিষেধ। বাড়ির কোনও সদস্যও বাইরে যেতে পারবে না। হাতরাসের বুলগাড়ি গ্রামে এভাবেই যোগীর পুলিস-প্রশাসনের ঘেরাটোপে বন্দি তাঁরা—নিহত তরুণীর পরিবার। গ্রামের প্রবেশপথের ২ কিমি আগেই বিপুল পুলিসবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলকে আটকে দেওয়ার জন্য।

গোপনীয়তা সর্বত্র। হাতরাস কাণ্ডের নেপথ্য ঘটনা আড়াল করতে এখন মরিয়া যোগী প্রশাসন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরপ্রদেশ পুলিস ও সরকারকে নোটিস পাঠিয়ে হাতরাসের ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে। কেন ওই তরুণীর মৃতদেহ গোপনে পরিবারের আড়ালে মধ্যরাতে সৎকার করে দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। সরকারকে বলেছে ১২ অক্টোবর আদালতে জবাব দিতে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও। এদিন বিকেলে তিনি ট্যুইট করেন, উত্তরপ্রদেশে মা ও বোনেদের সম্মান রক্ষা করা হয়। মহিলাদের সম্মানরক্ষাই আমাদের অগ্রাধিকার। এখানে মহিলাদের সম্মানহানি যারা করবে তাদের চরম শাস্তি দেওয়া হবে।

এরপরও চলছে কড়া পাহারা। যা পেরিয়ে শুক্রবার সকালে নিহত তরুণীর এক খুড়তুতো ভাই লুকিয়ে ছিল ধানখেত ও ছোট অরণ্যে। আচমকা গ্রামের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মিডিয়ার সামনে আচমকা হাজির হয় সে। এবং জানায়, আপনারা যেভাবে‌ই হোক বাড়িতে পৌঁছন। কী অসহনীয় চাপ চলছে সেকথা জানাতে চা‌ই আমরা। অভিযোগ করেন, তাঁর জেঠুকে এক অতিরিক্ত জেলাশাসক বুকে লাথি মেরেছে। পরিবারকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি আইনজীবীর সঙ্গেও। এভাবে কয়েকটি কথা বলার পরই পুলিস ওই কিশোরকে তাড়া করে। তৎক্ষণাৎ ধানখেত পেরিয়ে সে পালায় গ্রামের মধ্যে। তারপর থেকে চলল নিরন্তর মিডিয়া ও পুলিসের টানাপোড়েন। মিডিয়াকে কিছুতেই যেতে দেওয়া হল না তরুণীর বাড়িতে। দিনভর। ধাক্কা মেরে বের করে দেওয়া হল কাউকে, কারও ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হল। প্রশ্ন তোলা হল, কেন এভাবে তরুণীর পরিবারকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না? কতদিন এভাবে বহির্জগৎকে আটকে রাখা হবে? উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তদন্ত করছে গ্রামে। তাই কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তদন্ত সমাপ্ত হলেই সকলে যেতে পারে সকলে। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের উদ্বেগ বাড়িয়ে হাতরাস থেকে দিল্লি—সন্ধ্যা পেরিয়ে গভীর রাত… প্রবল বিক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয় শুক্রবার।

হাতরাস নিয়ে দেশজুড়ে প্রবল জনরোষ তৈরি হয়েছে। যোগী যাই বলুন, বিজেপি নেতৃত্ব কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখছে। আশঙ্কা, তাহলে কি ২০১২ সালের নির্ভয়াকাণ্ড পরবর্তী প্রতিক্রিয়া আবার আছড়ে পড়বে? বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে হাতরাসের এই ঘটনা প্রবল চিন্তায় ফেলেছে। কারণ, ২৬ দিন পর বিহারে ভোটে। হাতরাসের অত্যাচারিত ও নিহত তরুণী ছিলেন দলিত। বিহারের ভোটে বিরোধীদের প্রচারের অভিমুখ এটাই হবে না তো? এই উদ্বেগেই শুরু হয়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা। প্রথম পদক্ষেপ? হাতরাসের পুলিস সুপার এবং আরও দুই পুলিস অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে যোগী প্রশাসন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Uttar Pradesh, #hathras rape case, #Yogi Government

আরো দেখুন