হাথরাস সামলাতে যোগীর ভরসা ইনি
ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে, অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হল উত্তরপ্রদেশ সরকার? নাকি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিবিআই) হাতে তদন্তভার তুলে দিয়ে, সুকৌশলে রাজ্য পুলিশের উপর থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হল? শনিবার রাতে যোগী আদিত্যনাথ হাথরস-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করার পর থেকে এই ধরনের নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। তবে আদিত্যনাথ বা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নন, ‘রাম রাজ্যে’ বিজেপি ও যোগীর ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখতে এক আমলাই গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছেন বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
হাথরাস-কাণ্ডে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং তাদের অধীনস্থ পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ গোটা দেশ। অভিযুক্তদের আড়াল করা থেকে, পেট্রল ঢেলে রাতারাতি নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া এবং ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ যোগী সরকার। বিহার নির্বাচনে তার আঁচ গিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন। তাঁদের নির্দেশে যোগী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অবনীশ অবস্থিকে উত্তরপ্রদেশের তথ্য বিভাগ (মিডিয়া ও কমিউনিকেশন)থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
বৃহস্পতিবার অবনীশ অবস্থির জায়গায় তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয় আইএএস অফিসার নবনীত সেহগলকে। এককালে মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদবের সরকারে বিশ্বস্ত আমলা ছিলেন নবনীত। সংবাদমাধ্যম এবং কর্পোরেট কর্তাদের সঙ্গে ভাল ওঠাবসা রয়েছে তাঁর। হাথরস-কণ্ডে টালমাটাল অবস্থা থেকে যোগী সরকারকে বার করে নিয়ে যেতে, তাঁকেই কাণ্ডারী করা হয়েছে বলে খবর।
১৯৮৮ ব্যাচের আইএএস অফিসার নবনীত সেহগল উপস্থিত বুদ্ধির জন্য পরিচিত। তাঁকে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ বলেও ডাকেন কেউ কেউ। বলা হয়, কে কত ক্ষমতাশালী, তার তোয়াক্কা করেন না তিনি। তাঁর দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র কুর্সির কাছেই। তাই যখন যে-ই ক্ষমতায় আসুন না কেন, সেই ব্যক্তির প্রতি নয়, এক মাত্র কুর্সির প্রতিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তিনি।
২০০২ থেকে ’০৪ সাল পর্যন্ত লখনউয়ের জেলাশাসক ছিলেন নবনীত সেহগল। ২০০৭ থেকে ’১২, মায়াবতী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন, পাঁচ বছর তাঁর সচিব হিসেবে কাজ করেন তিনি। এর পর ২০১২-তে ক্ষমতায় আসেন অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশ থেকে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন অখিলেশ। তাই পূর্বতন মায়াবতী সরকারের সমস্ত আমলাদের কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যেই অখিলেশ ও তাঁর সরকারকে নিয়ে উচ্ছ্বাস কমে আসে মানুষের। ২০১৩-র মুজফ্ফরনগর দাঙ্গায় সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই অভিজ্ঞ নবনীত সেহগলকে তথ্য বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয়। তাঁর হাতে সব দায় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে একরকম নিশ্চিন্তই হয়ে যান অখিলেশ। লখনউ-আগরা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের নেতৃত্বেও নবনীতকে বসান তিনি। রাজ্যের পর্যটন এবং যুব কল্যাণ বিভাগের দায়িত্বও তাঁর হাতে ছেড়ে দেন অখিলেশ।
তা নিয়ে সেইসময় বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল নবনীত সেহগলকে। দিল্লি-আগরা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযগ উঠলে, তার ছিটে এসে লাগে তাঁর গায়েও। অভিযোগ প্রমাণ না হলেও, ২০১৭-র মার্চে বিজেপি ক্ষমতায় এলে খাদি ও গ্রামশিল্প বিভাগে বদলি করে দেওয়া হয় তাঁকে। পরবর্তী কালে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে। কোভিড পরিস্থিতিতে এই ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্পই যোগী সরকারের মুখরক্ষা করেছিল। তাতে খুশি হয়ে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ কমিটিতে জায়গা করে নেন তিনি। হাথরস-কাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতে দেখে তাই যোগী তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জল্পনা।