স্বস্তির নিঃশ্বাস, পুজোয় নামকরা ডাক্তাররা থাকছেন রোগীর পাশেই
উৎসবের মরশুম। প্রতিবার এই সময়ে মুমূর্ষু রোগীর পরিবারের একটাই প্রার্থনা থাকে, ‘মা, পুজোটা উতরে দাও।’ কারণ, এই ক’টা দিন যাই হয়ে যাক না কেন, এলাকায় ডাক্তার মেলা ভার। কেউ জেলার বাড়িতে, আবার কেউ দেশ-বিদেশে সফররত। ভালোমন্দ কিছু হয়ে গেলে? প্রেসক্রিপশনে তিনি লিখে যাবেন একটি নাম এবং নম্বর। বদলি চিকিৎসকের। আর বলবেন, সারা বছর তুমুল চাপে কাজ করার পর পরিবারকে সময় না দিলে চলে? তাহলে এত আলোচনা-সমালোচনা কীসের? আমরা কি মানুষ নই? রোগীরা বলেন, তা ঠিক। কিন্তু ওই সময় ফোনটা কেন ধরবেন না ডাক্তারবাবু?
এবার ধরবেন। এমনকী তাঁদের সাক্ষাৎও পাওয়া যাবে। সৌজন্যে করোনা মহামারী। কড়া বিধির গেরোয় বিমান চালু থাকলেও ট্রেন পরিষেবা ‘বিশেষ’ পর্যয়েই থমকে আছে। সঙ্গে প্রায় ঘরে ঘরে কোভিড সংক্রমণ। তার উপর রাজ্য সরকারের সরকারি ডাক্তার-কর্মীদের প্রতি কড়া নির্দেশ তো রয়েইছে। যা অমান্য করার উপায় নেই। তাই অধিকাংশ বড় ডাক্তারবাবুই এবার থাকছেন শহরে—হাতের নাগালে। যে এক-দু’জন গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন, তাঁরাও জানিয়েছেন যে ফোন ধরবেন। টেলিমেডিসিন ইউনিটের অংশ হিসেবে দরকারি পরামর্শও দেবেন। তাঁরাও যে রাজ্য সরকারের কোভিড যুদ্ধের সেনানি!
কমবেশি প্রতি বছর পুজোর সময় বিদেশে চিকিৎসা সম্মেলনে যোগ দিতে যান বিশিষ্ট হার্ট সার্জেন ডাঃ কুণাল সরকার। কখনও সখনও সঙ্গে থাকে পরিবারও। বুধবার এ প্রসঙ্গ তুলতেই হেসে ফেললেন ডাঃ সরকার। বললেন, এবার আর বেড়ানো কোথায়! সবক’টা দিনই অপারেশন, নয় তো রোগীদের মধ্যেই কাটাব। করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, বলা কঠিন। তাই সামনে থেকে মোকাবিলা যেমন করছি, করব। বিশিষ্ট গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট এবং রাজ্য সরকারের করোনা মোকাবিলার গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি বোর্ডের আহ্বায়ক ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘নাহ্, এবার আর বীরভূমে গ্রামের পুজোয় যাওয়া হবে না। রোগীদের হাতের কাছেই থাকব। সরকারি কাজকর্ম থাকবে। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী পুজোয় ছুটি নিতে বারণ করেছেন। চিন্তা নেই, ফোন ধরব রোগীদের। বিপদে আপদে যেমন থাকি, থাকব।’
বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম কমবেশি প্রতি পুজোতেই বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সপরিবারে বেড়াতে যান। গত বছর গিয়েছিলেন বেনারস। বললেন, ‘এবার পুজোয় আর বেড়াব কীভাবে? করোনার জন্য বিধি বাম! শহরেই থাকব। ইমার্জেন্সি লেবার বা অন্য অপারেশন দরকার হলেই করব।’ প্রবীণ ফিজিশিয়ান এবং রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায় অবশ্যই বীরভূমের সুরুর গ্রামের পারিবারিক পুজোয় যাচ্ছেন। বললেন, ‘কী করে না বলি! এ পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত আমি। ৮৫ বছরের জীবনে ৮১ বছরই পুজো দেখছি। এ বছর করোনার জন্য বিশেষ সতর্কতা নিয়েছি পুজোর আয়োজনে। তবে চিন্তা নেই রোগীদের। ফোনে ঠিক পাওয়া যাবে।’ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন মানুষ। আর ক্রেডিট দাবি করছে? করোনা।