করোনাও আটকাতে পারলো না বিজয়ার মিষ্টির বাঙালির পরম্পরা
একুশ শতকে সময় অনেকটা এগিয়ে গেলেও, দুর্গাপুজোয় থিম–সাবেকের টক্কর চললেও, করোনার জন্য জীবনের শঙ্কা থাকলেও বিজয়ার দিনে পরস্পরকে আলিঙ্গন, বড়দের প্রণামের পর ছোটদের মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করার প্রথা বা মিষ্টির দোকানে উপচে পড়া ভিড়ের দৃশ্য, আজও মনে করিয়ে দেয় অনেক কিছু ভুললেও বাঙালি আজও ভোলেনি তার মূল।
বিজয়ার সকাল হতেই মিষ্টির দোকানে দোকানে ভিড়। করোনা হলেও বিজয়া উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিন ধরেই মিষ্টির দোকানের কারিগরদের দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রায় সারা দিন ভিয়েন চাপিয়ে রকমারি মিষ্টি তৈরি। অনেকে গতকাল রাতেই একপ্রস্থ মিষ্টি কেনাকাটা সেরে রেখেছেন। তবে বেশিরভাগ বাঙালিই দশমীর রাতে শেষবেলার বিসর্জনের ক্লান্তিতে আর দোকানমুখো হবেননা। তাই সকালেই ব্যাগ হাতে মাক্স পরে সোজা মিষ্টির দোকানে।
নবীনচন্দ্র দাস, কে সি দাস, দ্বারিক, বলরাম মল্লিক রাধারমন মল্লিক, বাঞ্চারামের মতো বড় বড় দোকানগুলিতে তো বটেই পাড়ার ছোট দোকানগুলিতেও আজ উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতা সামলাতে গলদঘর্ম দোকানমালিক থেকে কর্মী, সবাই। বিক্রেতারা জানালেন, কোনও ক্রেতার পছন্দ পুরনো দিনের রসগোল্লা, লালমোহন, পান্তুয়ার মতো কড়া রসের মিষ্টি। তো কারও আবার পছন্দ কম চিনির সুগারফ্রি ডায়েট মিষ্টি।
কড়া পাক হোক বা নরম পাক, সন্দেশেও এসেছে অনেক বদল যেমন আমাদের জীবন হয়েছে ঘরবন্দী। সাবেক জলভরা তালশাঁস সন্দেশ, শাঁখ সন্দেশ বা কালাকাঁদ তো রয়েছেই, আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাওয়া যাচ্ছে গোলাপ সন্দেশ, কাজু বরফি, আইসক্রিম সন্দেশ বা স্যান্ডউইচ সন্দেশ। বিক্রেতারা আরও বললেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই খোঁজেন চকোলেট মিষ্টি। তাই চকোলেট সন্দেশ, চকোলেট ক্ষীরকদম, চকো রোল, চকোলেট রসগোল্লার মতো মিষ্টিও এখন রাখতে হয় শোকেসে।
আর মিষ্টি দইয়ের কদর তো বাঙালিদের কাছে বরাবরই। আজকের দিনে মিষ্টির সঙ্গেই তুঙ্গে থাকে নোনতার চাহিদাও। কুচো নিমকি, বড় নিমকি, পদ্ম নিমকি, নানান সাইজের গজা, রকমারি চিপস্, ভুজিয়া, চানাচুর, বাদ যাচ্ছে না কিছুই।