রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

করোনা আবহে জিএসটি আদায়ে রেকর্ড বাংলার

November 2, 2020 | 2 min read

করোনা আবহে লকডাউনের (Lock Down) কঠিন বাধা পার করে আনলক পর্বে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশীয় অর্থনীতি। এই পর্যায়ে যে সমস্ত রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছে, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও (West Bengal)। ঘুরে দাঁড়ানোর এই তথ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসের গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) (GST) বা পণ্য পরিষেবা কর আদায়ের ক্ষেত্রে। কঠিন এই সময়ে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা জিএসটি আদায় হয়েছে গোটা দেশে। এমনকী সংগ্রহের এই পরিমাণ এর আগের সমস্ত রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অর্থমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃদ্ধির নিরিখে যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে গত বছর একবার মাত্র ১ লক্ষ কোটির গণ্ডি পেরিয়েছিল জিএসটি সংগ্রহ। চলতি অক্টোবর মাসে বাংলায় জিএসটি আদায় হয়েছে ৩৭৩৮ কোটি টাকা। গত বছর এই মাসে আদায় হয়েছিল ৩২৬৩ কোটি টাকা। জিএসটি সংগ্রহে রাজ্যের বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনলক পর্বের গোড়া থেকে সাধারণের জীবন-জীবিকার স্বার্থে এবং জনজীবনকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যে সমস্ত পদক্ষেপ করেছিলেন, তারই সুফল মিলেছে জিএসটি সংগ্রহে। পণ্য ও পরিষেবা কর আদায়ের এই বৃদ্ধি প্রতিফলিত হবে রাজ্যের কোষাগারে। সূত্রের খবর, এই পর্বে স্টেট জিএসটি এবং আইজিএসটি বাবদ যে অর্থ রাজ্যের ভাঁড়ারে আসবে, তা দু’হাজার কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্টেট জিএসটি খাতে পশ্চিমবঙ্গের বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৬ শতাংশ। এবার তা কোনওভাবেই ১০ শতাংশের কম নয় বলে জানাচ্ছে অর্থনৈতিক মহল।

গত মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার পর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গোটা দেশে জিএসটি আদায় ছিল নিম্নমুখী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যেখানে গত এপ্রিল মাসের জিএসটি আদায় বাবদ রাজ্যওয়াড়ি কোনও তথ্য পরিবেশিত হয়নি। রাজ্যের অর্থদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসেও অবস্থার কোনও হেরফের হয়নি। অর্থাৎ তখনও মেলেনি রাজ্যওয়াড়ি পরিসংখ্যান। আনলক পর্বের গোড়া থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকর্ম পুরোদমে শুরু করার জন্য নানা সংস্কার, পরিকল্পনা এমনকী ছাড়ের ঘোষণাও করেছিলেন মমতা। ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করে রাজ্যের নিজস্ব অর্থনীতি। লকডাউন পর্বে গোড়ার দিকে জিএসটি খাতে রাজ্যের বৃদ্ধি যেখানে মাইনাস ৪০-৫০ শতাংশে এসে ঠেকেছিল, তা গত জুন মাসে মাইনাস ১১ শতাংশ, জুলাই মাসে মাইনাস ১৬ শতাংশ এবং আগস্ট মাসে মাইনাস ১৩ শতাংশে গিয়ে পৌঁছয়। জিএসটি আদায়ে ‘কালো মেঘ’ কাটে গত সেপ্টেম্বর মাসে। কর সংগ্রহে লাগাতার ‘মাইনাস’-এর গেরো কাটিয়ে ওই মাসেই প্রথম প্লাসে পৌঁছায় রাজ্যের জিএসটি আদায়। অর্থমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে জিএসটি বাবদ পশ্চিমবঙ্গে আদায় হয়েছিল ৩৩৯৩ কোটি টাকা। যেখানে গত বছর এই মাসে আদায় হয়েছিল ৩২৫৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বৃদ্ধির হার চার শতাংশ। সেই বৃদ্ধির হারকেও ছাপিয়ে অক্টোবর মাসের জিএসটি আদায়ের সাফল্যকে রাজ্যের অর্থনীতির পক্ষে সদর্থক ইশারা বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক মহল।

অর্থমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অক্টোবর মাসে জিএসটি কর সংগ্রহে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি। তাদের সঙ্গেই স্বমহিমায় তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বরং বৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রে অনেক পিছনে রয়েছে বড় রাজ্য মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, বিহারের মতো রাজ্যগুলি। গোটা দেশজুড়ে জিএসটি সংগ্রহের জোয়ার পর্বেও ভাটা পড়েছে চণ্ডীগড় এবং দিল্লির মতো অর্থনৈতিক হাব বলে পরিচিত এলাকায়। অক্টোবরে জিএসটি বাবদ চণ্ডীগড়ের বৃদ্ধির হার মাইনাস তিন শতাংশ। আরও খারাপ অবস্থায় রয়েছে দেশের রাজধানী দিল্লি। তাদের বৃদ্ধির হার মাইনাস আট শতাংশ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #GST

আরো দেখুন