রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

সংক্রমণ রুখতে বাংলার উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

November 2, 2020 | 2 min read

করোনার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে লড়াই করছে সব রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ রুখতে নানা পদক্ষেপ করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্য সরকারের নেওয়া সেই সব সিদ্ধান্তগুলির প্রশংসা করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। করোনাকে কেন্দ্র করে কোন রাজ্য কী ভূমিকা নিল, তাদের আর্থিক পরিস্থিতিই বা কী, তার পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আরবিআই। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দিয়েছে তারা।

রাজ্য সরকার কোভিড (Covid 19) মোকাবিলায় স্বাস্থ্যদপ্তরকে অতিরিক্ত টাকা দিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সবার আগে এই পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও সেই বাড়তি টাকার পরিমাণ কত, তা তারা জানায়নি। আরবিআই (RBI) জানিয়েছে, দেশে মোট চারটি রাজ্য এই কাজ করেছে। বাংলা ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে তামিলনাড়ু, রাজস্থান ও সিকিম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যেভাবে বিমার আওতায় এনেছেন, তা অন্য কোনও রাজ্য করেনি, রিপোর্ট তেমনই বলছে। বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, বলছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এছাড়াও তারা জানাচ্ছে, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে আর্থিক ও সামাজিকভাবে দাঁড়িয়েছে রাজ্য। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মী সহ অন্যান্য শ্রমিকদের জন্যও তাদের অবদান কম নয়।

করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পরিযায়ী শ্রমিক। ভিনরাজ্য হোক বা ভিনদেশি— পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মূলত দু’টি দিক দেখতে হয়েছে রাজ্যকে। প্রথমত, তাদের শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখা, সংক্রমণ রুখতে সেফ হোমের ব্যবস্থা ও চিকিৎসা করা। দ্বিতীয়টি হল, তাদের অন্ন জোগানো ও বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা।

প্রথমে আসা যাক বিদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের বিষয়ে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব বলছে, বন্দে ভারত প্রকল্পে ১৩৭টি দেশ থেকে ১৮ লক্ষ কর্মীকে ফেরানো হয়েছে। এই বিষয়ে প্রথম স্থানে কেরল থাকলেও, দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও (West Bengal) অন্যতম। আরবিআ‌ই বলছে, করোনাকালে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে দেশে। তা বড় রকমের আর্থিক চাপ তৈরি করেছে। কিন্তু ভিনদেশ থেকে ফিরে আসা কর্মীদের জন্যও রাজ্যগুলিকে চাপ নিতে হচ্ছে। তা আর্থিক ক্ষতিও বটে।

যেসব রাজ্য থেকে নিজের রাজ্যে শ্রমিকরা ফিরে এসেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল চারটি রাজ্য। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও রাজস্থান। এর মধ্যে গুজরাত থেকে বাংলায় ফিরেছে ৩৮ হাজার শ্রমিক। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং তালিমনাড়ু থেকে এসেছে যথাক্রমে ১.০১ লক্ষ, ৭২ হাজার ও ৪৭ হাজার শ্রমিক। পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্য তো আছেই। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে সামাজিক ও আর্থিকভাবে যথেষ্ট সাহায্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য কাজের নির্দিষ্ট প্রকল্প ঘোষণা, বাইরে থেকে আসা সব ধরনের কর্মীদের জন্য বিকল্প রুটিরুজির আয়োজন করেছে রাজ্য।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বীকার করেছে, এরাজ্যের সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কন্টেইনমেন্ট জোন কোথায় কোথায়, সেই তথ্য থেকে শুরু করে করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে সরকারি হরেক ওয়েবসাইট। আনা হয়েছে ‘সন্ধানে’ অ্যাপ, যেখানে মিলছে পরিষেবা সংক্রান্ত নানা তথ্য। চালু হয়েছে ই-রিটেল মোবাইল অ্যাপ, যার নাম ‘অন্নদাত্রী’। খোলা হয়েছে ‘কর্মভূমি’ অ্যাপ, যা কাজের সন্ধান দেবে। এছাড়া আনা হয়েছে ‘প্রচেষ্টা’ এবং ‘স্নেহের পরশ’ অ্যাপ, যা নানা আর্থিক সুবিধা ও পরিষেবা দিচ্ছে রাজ্যবাসীকে। সব মিলিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, এমনটাই মনে করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #RBI, #covid19

আরো দেখুন