বয়স্কদের শরীরে দারুণ কার্যকরী অক্সফোর্ডের টিকা, দাবি অ্যাস্ট্রাজেনেকার
এ বার পরীক্ষার ফল ঘোষণা করল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার (AstraZeneca) সঙ্গে করোনার প্রতিষেধক তৈরি করছে তারা। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় ধাপের ফলাফলে অক্সফোর্ড দাবি করল, ৬০-৭০ বছর বয়সি প্রবীণ, করোনায় যাঁদের ঝুকি সবচেয়ে বেশি, তাঁদের শরীরে জোরদার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে প্রতিষেধকটি।
গত দু’সপ্তাহ ধরে রোজই কোনও না কোনও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা খবরের শিরোনামে। প্রথমে আমেরিকার সংস্থা ফাইজ়ার দাবি করে, তাদের ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। তার পর থেকে কখনও রাশিয়া বলছে তাদের ভ্যাকসিন ৯২ শতাংশ কার্যকরী, কখনও আমেরিকার সংস্থা মডার্না বলছে তারা ৯৫-এ, কখনও নম্বর বাড়াচ্ছে ফাইজ়ার। আজ অক্সফোর্ড জানিয়েছে, ‘ল্যানসেট’ জার্নালে তাদের পরীক্ষার রেজ়াল্ট বেরিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে ৫৬০ জন প্রবীণ অংশগ্রহণকারীদের উপরে পরীক্ষা হয়। রিপোর্ট বেশ ‘আশাব্যঞ্জক’।
অক্সফোর্ডের (Oxford) তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে এখন। তাতে বেশি সংখ্যক মানুষের উপরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক রেজাল্ট জানতে আরও এক সপ্তাহ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ‘‘ট্রায়ালের ফল দেখে আমি বেশ উচ্ছ্বসিত। সত্তরোর্ধ্বদের শরীরেও বেশ ভাল কাজ দিচ্ছে।’’ পোলার্ড জানান, বড়দিনের আগেই ট্রায়ালের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘তাড়াহুড়োর কিছু নেই। অন্য ভ্যাকসিনগুলোর সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতা চলছে না। হয়তো একাধিক ভ্যাকসিন শেষমেশ কার্যকর হবে। আর সেটা ভাল খবর। গোটা পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে হবে।’’
বয়স্কদের শরীরে ভ্যাকসিনটি কাজ দেওয়ায় বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশই খুশি। প্রবীণরা এমনিতেই কমবয়সিদের তুলনায় দুর্বল। বয়সজনিত কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। ট্রায়াল রিপোর্টে দেখা গিয়েছে ৫৬-৬৯ বয়স, এমনকি ৭০-এর উপরেও সমান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে, যেমনটা হচ্ছে ১৮ থেকে ৫৫-য়। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী দলের সদস্য গবেষক মহেশি রামস্বামী বলেন, ‘‘বয়স্ক, কমবয়সি, সবার শরীরে সমান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে আমাদের টিকা। খুবই ভাল লাগছে বিষয়টা দেখে।’’
অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটির সংরক্ষণ নিয়েও ঝামেলা নেই। অক্সফোর্ড জানাচ্ছে, তারা এই সংরক্ষণের বিষয়টি মাথায় রেখেই টিকা তৈরি করছে। সঙ্গে মাথায় রাখা হয়েছে আরও কিছু বিষয়। যেমন, কম খরচে তৈরি এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশে সহজে সরবরাহ। বৃহস্পতিবার ফাইজ়ারের সহযোগী সংস্থা বায়োএনটেকের কর্ণধার উগর সাহিন বলেছেন, ‘‘টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধরা পড়েনি। বয়স ও অবস্থান ভেদে কার্যকারিতার কোনও তারতম্য নেই। সব কিছু ঠিক মতো এগোচ্ছে। আশা করছি ডিসেম্বরের গোড়াতেই করোনার টিকা উৎপাদনের ছাড়পত্র পাব। বড়দিনের আগেই বাজারে আনতে পারব ভ্যাকসিন।’’