নির্বাচন যতোই এগিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে ভুয়ো খবরের চ্যানেলের সংখ্যা
২০২১- এর বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গেছে। যুদ্ধের জন্যে তৈরি হচ্ছে সব রাজনৈতিক দল। তারই সাথে গজিয়ে উঠেছে ৩০ টিরও বেশি ভুয়ো নিউজ পোর্টাল (News Portal) আর ওয়েবসাইট (Website), যাদের একমাত্র কাজ মিথ্যে খবর (Fake news) ও ভিডিও (Fake video) প্রচার করা।
তদন্ত করে দেখা গেছে এই সব সাইটগুলি ২০১৮- ২০২০- র মধ্যে তৈরি হয়েছে। আর সকলেই প্রায় বিজেপি (BJP) পার্টির হয়ে প্রচার করছে। একটি বা দুটি বাদে সবকটিই বাংলায়।
ইন্ডিয়া রাগ, বার্তা টুডে, ক্যাম্পেইন কলিং মিডিয়া, ভারত নিউজ, বঙ্গদেশ, কলকাতা প্রাইম টাইম, টাইমস বেঙ্গল, বেঙ্গল নিউজ ২৪, এসওএম এক্সট্রা, বেঙ্গল টাইমস, জিএস মিডিয়া এবং ফরইউ বাংলার মতো এই ওয়েবসাইট এবং চ্যানেলগুলির প্রায় ৮০%-ই কোন সুস্পষ্ট মালিকানা নেই, বা এদের সম্পর্কে কোথাও কোন তথ্যও দেওয়া নেই। বাকী ২০%-এর যে তথ্য দেওয়া আছে তাও পরিষ্কার নয়। যেমন, “আমরা একটি মিডিয়া এবং নিউজ পোর্টাল” বা “এই চ্যানেলটি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিদিনের খবর সরবরাহ করবে”, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরকমই ২৬ টি ইউটিউব চ্যানেলের (Youtube Channel) মধ্যে ৬ টি ২০২০ তেই খোলা হয়েছে, ১১ টি ২০১৯- এ, ৪ টি ২০১৮- তে এবং বাকি ৬ টি ২০১৭ তে।
খবরের ওয়েবসাইটগুলির বেশিরভাগেরই কোন সঠিক তথ্য বা যোগাযোগের কোন ঠিকানা দেওয়া থাকে না।
টেক নিউজ বাংলা, ডেইলি জবস আপডেট এবং বাংলার লোকগান এই চ্যানেলগুলি নিজ নিজ ক্ষেত্রের যথেষ্ট জনপ্রিয় চ্যানেল। যেমন টেক নিউজ বাংলা একবছর আগে অবধিও প্রযুক্তির বিষয়ে বিভিন্ন খবরা খবর দিত, ডেইলি জবস আপডেট চাকরির বিষয়ে এবং বাংলার লোকগান সাংস্কৃতিক খবরা খবর। হঠাৎ করেই তারা হয়ে উঠেছে বিজেপির মুখপত্র।
তদন্তে দেখা গেছে এই ভুয়ো ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটগুলি বেশিরভাগই বিজেপি বা আরএসএসের (RSS) পক্ষপাতদুষ্ট। ইন্ডিয়া রাগ, ভারত নিউজ, রূপম টিভি, দ্য বেঙ্গল আউল এইসব চ্যানেলগুলিই বিজেপির হয়ে ভুয়ো খবর প্রচার করে।
কিছুদিন আগে ভারত নিউজ প্রচার করে যে অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) বলেছেন পাবজি বন্ধ হলেই ভারতের অর্থনীতি উর্ধমুখী হবে। পরে জানা যায় এটি সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর। এর আগেও এই চ্যানেল বহুবার এইরকম ভুয়ো খবর প্রচার করেছে।
ইন্ডিয়া রাগের মতো চ্যানেল সীতারাম ইয়েচুরি সম্পর্কে বলে যে তিনি বলেছেন হিন্দুরা হিংস্র। যেটিও ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যে। সিপিএম এই চ্যানেলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছেও যায়।
এই চ্যানেলগুলির ভুয়ো খবর প্রচারের প্রকৃতি খানিকটা এরকম, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার বেশধারী জেহাদি উমার খালিদ ধরা পড়ল’ বা ‘মমতার পুলিশ স্বাধীনতা দিবস এবং দুর্গা পুজো পালনে বাঁধা দিচ্ছে’। নিজেদেরকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে এরা এই খবরগুলির সাথে সাথেই লেখে ‘এটি লেখকের বক্তব্য ওয়েবসাইট বা কর্তৃপক্ষ এর জন্যে কোনভাবেই দায়ী নয়”।
শুধু এরাই নয় আনন্দ বাজার পত্রিকার মতো বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় খবরের কাগজও তেলেনিপাড়া নিয়ে মিথ্যে খবর প্রকাশ করেছিল।
বিজেপির আইটি সেলের একজন কর্তার মতে ২০১৯- এর লোকসভা ভোটের ফলফলে বাংলায় বিজেপির ৫০,০০০ হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp group) গ্রুপ বড় ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখ্য হোয়াটসঅ্যাপ- ই এখন ভারতের সবচেয়ে বড় প্রচার মাধ্যম। ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি।