জিএসটি আদায়ে আবারও এগিয়ে বাংলা
সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসেও গোটা দেশে জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ ছাড়াল এক লক্ষ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও এই অঙ্ক ছাপিয়ে যেতে পারল না অক্টোবরের পরিসংখ্যানকে। পুজোর মাসের তুলনায় গত মাসে জিএসটি আদায় কমেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বরং সেই নিরিখে ফের উজ্জ্বল অবস্থানে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নানা অর্থনৈতিক সংস্কারের জেরে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে জিএসটি আদায় গতি পেয়েছিল বাংলায়। রাজ্যের প্রাপ্য এসজিএসটি এবং আইজিএসটি’র পরিমাণও বাড়তে থাকে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে নভেম্বর মাসেও। বরং গত অক্টোবর মাসের তুলনায় রাজ্য জিএসটি আদায় করেছে বাড়তি ৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় বাংলায় জিএসটি আদায় হয়েছে ৮ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ প্রাক-করোনা সময়কালের তুলনায় কোভিড ১৯ বিপর্যয়ের এই পর্বে বাংলায় জিএসটি আদায় বেশি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জিএসটি (GST) সংগ্রহের এই পাকাপোক্ত অবস্থানে শুধু রাজস্ব বৃদ্ধিই নয়, বাংলা পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি এবং তার সহযোগীদের শাসিত সাতটি রাজ্যকে। এমনকী রাজধানী দিল্লি, তেলেঙ্গানা এবং বাম শাসিত কেরলও অনেক পিছিয়ে মমতার রাজ্য থেকে। এর মধ্যে বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য উত্তরাখণ্ড এবং হরিয়ানায় নভেম্বর মাসে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ ‘শূন্যে’ এসে ঠেকেছে। এছাড়াও রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এনডিএ শাসিত যে কটি রাজ্য নভেম্বরে ‘মাইনাসে’ পৌঁছেছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী বিহার (১২ শতাংশ), অসম (১ শতাংশ), উত্তরপ্রদেশ (৩ শতাংশ), কর্ণাটক (১ শতাংশ) এবং গোয়া (১২ শতাংশ)। পাশাপাশি মাইনাসে রয়েছে মহারাষ্ট্র (৬ শতাংশ), দিল্লি (১৫ শতাংশ), তেলেঙ্গানা (৫ শতাংশ) এবং কেরল (৭ শতাংশ)। প্রসঙ্গত, নভেম্বর মাসে জিএসটি বাবদ বাংলা সংগ্রহ করেছে ৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে যা ছিল ৩৭৩৮ কোটি ।
অর্থমন্ত্রক মঙ্গলবার জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে জিএসটি আদায়ের পরিমাণ প্রায় অক্টোবর মাসের মতোই। ১ লক্ষ ৪ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। গত অক্টোবর মাসে যা ছিল ১ লক্ষ ৫ হাজার ১৫৫ কোটি। তার মধ্যে ১৯ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় জিএসটি। রাজ্য জিএসটির পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। আর ইন্টিগ্রেগটেড জিএসটির পরিমাণ ৫১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।
নভেম্বর মাসের অঙ্কটি এই কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ যে, অক্টোবর মাস ছিল উৎসবের মরশুম এবং দীপাবলির ঠিক আগের সময়। অর্থাৎ ওই মাস ঘিরেই প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা এবং আর্থিক লেনদেন হয়। করোনা আবহে (Coronavirus) খানিক সংশয় থাকলেও শেষমেশ ইতিবাচক ছবিই দেখা গিয়েছে। অক্টোবর মাসের মতোই নভেম্বর মাসেও জিএসটি সংগ্রহ একই থেকে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রক কার্যত স্বস্তির বার্তা পাচ্ছে। কারণ, ১৪ নভেম্বরের দীপাবলির পরও জিএসটি আদায়ের প্রবণতা বিশেষ ধাক্কা খায়নি। সুতরাং অর্থনীতি স্থায়ীভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর মোট জিএসটি আদায়ের হার প্রায় দেড় শতাংশ বেড়েছে। চলতি আর্থিক বছরের পরপর দু’টি ত্রৈমাসিকের জিডিপি বৃদ্ধিহার যেখানে শূন্যের নীচে, সেখানে পরপর দু’টি মাসের জিএসটি সংগ্রহ ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় আশার আলো দেখছে সরকারই।