বন্ধ হচ্ছে মালগাড়ির গার্ড ভ্যান, কর্মীরা চিন্তায়
মালগাড়িতে উঠে যাচ্ছে গার্ড ভ্যান (Guard Van)। যার ফলে পণ্যবাহী ট্রেনের প্রায় ১৬ হাজার গার্ডের ভবিষ্যৎ নিয়েই তীব্র জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। আয় বাড়াতে আরও বেশি পণ্য পরিবহণের লক্ষ্য রয়েছে রেলের। তাই বিভিন্ন মালগাড়িতে গার্ড ভ্যানের জায়গা নেবে অতিরিক্ত একটি পণ্য বোঝাই ওয়াগন। চলন্ত অবস্থায় পণ্যবাহী ট্রেনের চালকের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। তবে রেল বোর্ড সূত্রের খবর, আপাতত দেশের কোনও যাত্রীবাহী ট্রেনে এমন ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ট্রেনেই এহেন বন্দোবস্ত চালুর পথে হাঁটতে চলেছে রেলমন্ত্রক। বর্তমানে সারা দেশে ছ’হাজারের কিছু বেশি মালগাড়ি চলাচল করে।
যদিও বিতর্ক এড়াতে রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নয়া ব্যবস্থা কার্যকর হলেও রেলকর্মীদের কাজ হারানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। রেলমন্ত্রকের অতিরিক্ত মহানির্দেশক (জনসংযোগ) ডি জে নারায়ণ বলেছেন, ‘পণ্যবাহী ট্রেনগুলির একজন গার্ডেরও চাকরি যাবে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী রেল সংশ্লিষ্ট গার্ডদের অন্য যাত্রীবাহী ট্রেনে শিফট করাবে। তাছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত দীর্ঘ। বিভিন্ন পর্যায়ে তা করা হবে।’ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, গার্ড ভ্যান উঠে যাওয়া যে মালগাড়ির গার্ডকে অন্য যাত্রীবাহী ট্রেনের দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেই যাত্রীবাহী ট্রেনের গার্ডকে কোথায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? নাকি গার্ড-ভ্যান উঠে যাওয়া মালগাড়ির গার্ড যাত্রীবাহী ট্রেনের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন? এই প্রশ্নগুলির কোনও স্পষ্ট জবাব অবশ্য মেলেনি।
চলন্ত অবস্থায় মালগাড়ির (wagon) চালকের সঙ্গে যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযোগ রাখা হবে তার নাম ‘এন্ড অব ট্রেন টেলিমেট্রি সিস্টেম’ (ইওটিটি)। একটি পণ্যবাহী ট্রেন যখন চলতে থাকে, তখন একদম শেষ প্রান্তে গার্ড ভ্যানে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলকর্মী প্রতি মুহূর্তে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। বিশেষ করে শেষের দিক থেকে কোনও ওয়াগন মালগাড়ি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে কি না, সেই ব্যাপারে কড়া নজর রাখতে হয় একজন গার্ডকে। নয়া বন্দোবস্ত চালু হয়ে গেলে মালগাড়িতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, কিংবা কোনও ওয়াগন আলাদা হয়ে গিয়েছে কি না, মুহূর্তের মধ্যে সংশ্লিষ্ট লোকো পাইলটকে সেই সঙ্কেত দেবে ইওটিটি সিস্টেম। সেইমতো পদক্ষেপ নেবেন চালক। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছে রেল বোর্ড। সেখানে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ২০০টি ওয়াগন রয়েছে অথবা সর্বাধিক আড়াই কিলোমিটার লম্বা, এমন মালগাড়িতে খুব সহজেই কাজ করবে ইওটিটি ব্যবস্থা। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম ট্রেনেও ব্যবহার করা যাবে এই প্রযুক্তি। জানা যাচ্ছে, ইস্ট-কোস্ট রেলওয়ের কয়েকটি মালগাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থা কার্যকর করেছে রেলমন্ত্রক।