এভারেস্টের নতুন উচ্চতার ঘোষণা আজ, নেপথ্যে বাঙালি
‘এক হিমালয় ছাড়া—মাস্ল নেই মশাই।’ সেই কবে এই উপলব্ধি বাঙালির সঙ্গে শেয়ার করে গিয়েছেন লালমোহন গাঙ্গুলি। একে মাস্ল, তায় আবার ভঙ্গিল পর্বত। মানে যার এখনও বৃদ্ধির বয়স রয়েছে। আর হিমালয় মানেই যে সবার আগে মাউন্ট এভারেস্ট (Mount Everest)। সেই কবে, ১৮৫৬ সালে যার উচ্চতা মেপে গিয়েছেন রাধানাথ শিকদার। তারপর আরও দু’বার সমীক্ষা হয়। কিন্তু, কয়েক বছর আগে ফের জল্পনা শুরু হয়, ওই উচ্চতা কি একই আছে? বাড়েনি, কমেওনি? তারপরই শুরু হয় গবেষণা। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। আজ, মঙ্গলবার এভারেস্টের নতুন উচ্চতা ঘোষণা করতে চলেছে নেপাল এবং চীন। যৌথভাবে দুই দেশ এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে তা জানাবে। নেপাল সার্ভে বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সুশীল দাঙ্গল জানিয়েছেন, গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা এই সমীক্ষা চালাচ্ছিলেন। অবশেষে মঙ্গলবার দুই দেশের পক্ষ থেকে ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নয়া উচ্চতা ঘোষণা হবে। সে ছিল এক বাঙালির সাফল্য। আর ঘটনাচক্রে এবারও এক বাঙালিরই হাতে এভারেস্টের উচ্চতা নিয়ে গবেষণা—পরমেশ গঙ্গোপাধ্যায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভারত-নেপালের বিরাট অংশে ছিল ব্রিটিশদের শাসন। সেই সময়েই পৃথিবীর এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গর উচ্চতা মাপার কাজ শুরু হয়। তিন বছরের পরিশ্রমে ১৮৫৬ সালে সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়—২৯ হাজার ২ ফুট। সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী রাধানাথ শিকদারের হাত ধরে। পরবর্তী সময়ে সেই সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নামকরণ করা হয় জর্জ এভারেস্টের নামে। ১৯৫৫ সালে সার্ভে অব ইন্ডিয়া এবং ১৯৭৫ সালে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এভারেস্টের উচ্চতা ২৯ হাজার ২৯ ফুট (৮ হাজার ৮৪৮ মিটার)। এরপর ১৯৯৯ সাল। আমেরিকার এক গবেষক তথা পর্বতারোহী এভারেস্টের উচ্চতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জানান, কিছু তারতম্য অবশ্যই হয়েছে। যদিও এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে তখন চূড়ান্ত কোনও তথ্য জানানো হয়নি। ২০০১ সাল থেকে চীন শুরু করে এভারেস্টের উচ্চতা মাপার কাজ। চার বছর পর তারা জানায়, এভারেস্টের উচ্চতা দু’মিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৮৫০ মিটার হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মহল থেকে তার পক্ষে সিলমোহর দেওয়া হয়নি। তাই এতদিন পর্যন্ত রাধানাথবাবুর হিসেবই ছিল শেষ কথা।
২০১৫ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর নেপাল দাবি করে, এভারেস্টের উচ্চতা নিশ্চিত বেড়েছে। একই দাবি তোলে চীনও। ২০১৭ সালে দুই দেশই এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপের কাজ ফের শুরু করে। আলাদা আলাদাভাবে। এর জন্য নেপালের পক্ষ থেকে জিপিএস প্রযুক্তিও বসানো হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের একাধিক জায়গায়। পাশাপাশি নিয়োগ করা হয় এক বিশেষজ্ঞ ভূ-পদার্থ বিজ্ঞানীকে। তিনিই পরমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলছিলেন, ‘১৫০ বছরেরও আগে রাধানাথবাবু যে কাজ করেছিলেন, আজ সেই দায়িত্ব আমার কাঁধে। এজন্য আমি গর্বিত।’ নেপাল সার্ভে বিভাগের পক্ষ থেকে এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করা প্রযুক্তিগত পদ্ধতি এবং তথ্য বিশ্লেষণ—সব কাজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরমেশবাবু আরও বলেন, ‘দায়িত্বটা পাওয়ার পর রীতিমতো রোমাঞ্চ হচ্ছিল। গত দেড় বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে এর নেপথ্যে। উল্লেখযোগ্যভাবে রাধানাথবাবুর আমলে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছিল, এখন তা অনেকটাই আধুনিক। এবার নেপাল সার্ভে ইন্ডিয়া তাঁরই তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপের কাজ করেছে।’