মার্কিন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে সংঘর্ষ, নিহত এক ট্রাম্প সমর্থক!
দিনটা ছিল জো বাইডেনের সংশাপত্র পাওয়ার। সেটাই হয়ে দাঁড়াল মার্কিন ইতিহাসে অন্যতম অভাববনীয় ঘটনার দিন। মার্কিন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের সংঘর্ষ ঘিরে উত্তাল হল ওয়াশিংটন। বাইডেনকে ঠেকাতেই বুধবার আমেরিকার কংগ্রেসের ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা চালালেন ট্রাম্পের সমর্থকরা। কয়েক হাজার ট্রাম্প অনুগামী ট্রাম্পের হয়ে স্লোগান তুলে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলেন। এতেই ঘটে বিপত্তি।
ট্রাম্প সমর্থকদের এই অভাবনীয় বিক্ষোভের জেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ক্যাপিটল বিল্ডিং চত্বর। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে চড়াও হতে হয় পুলিশকে। তা সত্ত্বেও দফায় দফায় ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাপিটলে ঢোকার চেষ্টা করেন ট্রাম্প সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে এক জন গুরুতর জখম হন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়াও আরও অনেক বিক্ষোভকারী জখম বলে জানা গিয়েছে। এদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে।
নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী বাইডেনকে (Joe Biden) প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিলমোহর দিতে তখন যৌথ অধিবেশন চলছে কংগ্রেসের। আর ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের বাইরে তখন লাখ লাখ ট্রাম্প-সমর্থকদের ভিড়। আরও একবার ভোটে কারচুপির অভিযোগ তাঁদের মুখে। পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে তা আঁচ করতে পেরে আগে থেকেই ক্যাপিটল হিলসে মোতায়েন করা হয়েছিল পর্যাপ্ত পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড। তাতেও লাভ হয়নি।
প্রথমে বিল্ডিংয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল রিপাবলিকানরা। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের চারিদিক মুড়ে ফেলা হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। বসানো হয়েছিল ব্যারিকেড। কিন্তু বাইরে ট্রাম্পের সমর্থকদের ভিড় আরও বাড়তে শুরু করে। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক দফা ধস্তাধস্তির পর ব্যারিকেড ভেঙে মার্কিন ক্যাপিটলের ভিতরে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা। গুলিবিদ্ধ হন একজন নাগরিক। তড়িঘড়ি ওই মহিলাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শ্বেতাঙ্গ ওই মহিলাকে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের বাইরে গুলি করা হয়। তাঁর বুকে গুলি লেগেছিল বলে খবর। জখম হয়েছেন আরও কয়েকজন আধিকারিক।
এদিকে ঘটনার জেরে লকডাউন জারি করা হয় ক্যাপিটল বিল্ডিং-এ। ভিতরে তখনও কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের হটাতে সেনেটের দিকে স্মোক গ্রেনেড ব্যবহার করেন নিরাপত্তা আধিকারিকরা। শেষ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপিটল বিল্ডিং থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করা সম্ভব হয়েছে।
ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ভিতরে যখন এই তাণ্ডব চলছে, তখন বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (Donald Trump) তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা দেন। বলেন, ‘আমরা জানি নির্বাচন আমাদের থেকে চুরি করে নেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন ধসের মতো, সেটা সবাই জানে বিশেষ করে বিরোধী শিবির। কিন্তু আপনাদের এখন ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। আমাদের উচিত আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা । আমরা কাউকে আঘাত করতে চাই না।’
ট্রাম্পের এই টুইট বার্তার পর টুইটার কর্তৃপক্ষের তরফে কড়া পদক্ষেপ করা হয়। হিংসায় প্ররোচনা বন্ধ করতে প্রথমে ওই টুইট বার্তার রিপ্লাই ও রিটুইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১২ ঘণ্টার জন্য ট্রাম্পের টুইটার হ্যান্ডেল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও ট্রাম্পের ভিডিয়ো বার্তা সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।