ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

শীতের গোয়ায় লাগবে নাচন 

January 11, 2021 | 2 min read

শীতকালে গোয়ায় বেড়াতে যাওয়ার আলাদা এক মাধুর্য আছে। যদিও এই সময় সৈকত রাজ্যে সব কিছুর দাম যেমন আকাশছোঁয়া, ভিড়ের চোটে ঠাঁই পাওয়াও তেমনই কঠিন। কিন্তু, করোনার প্রকোপে এখন গোয়ায় সার্জ প্রাইস তো নেই, বিচ রিসর্টেও ডিসকাউন্ট। ক্রুজ়ও আগে থেকে বুক করতে হবে না। সব টুরিস্ট স্পটই অস্বাভাবিক ফাঁকা। 

পানাজি শহরে থাকতে গেলে ঠিকানা ফনটেনহাস হওয়াই উচিত। প্রাচীন পর্তুগিজ় পাড়া, সব স্থাপত্য সে রকম। সরু রাস্তাগুলো যেন ছবিতে আঁকা, যেমন দেখা যায় ইউরোপের নানা শহরে। পুরনো ভিলা বা ছোট বাড়িগুলোর টানা ঝুলবারান্দা, হলুদ সবুজ নীল রঙে চোখ জুড়িয়ে যায়। পর্তুগিজ় ঐতিহ্যে রঙিন এই পাড়া ইউনেস্কো হেরিটেজ জ়োন। সকালবেলার আলোয় পায়ে হেঁটে ফনটেনহাসের অলিগলিতে ঘুরে না বেড়ালে গোয়া দেখা অসম্পূর্ণ। 

পানাজি থেকে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন নর্থ গোয়া আর ওল্ড গোয়া। বাঁধা সাইটসিইং নয়, পড়াশোনা করে রুট করতে পারেন। অতিমারির বাজারে পর্যটকের মর্জিমাফিক ঘুরতে আপত্তি করবে না কোনও গাড়িই। প্রাচীন পর্তুগিজ় ঘাঁটি আগুয়াড়া দুর্গ এবং ‘দিল চাহতা হ্যায়’-খ্যাত ভগ্নপ্রায় চাপোরা দুর্গে ইচ্ছেমতো হাঁটা গেল, বসা গেল, ছবি তোলা যাবে। আঞ্জুনা এবং সিঙ্কেরিম বিচে নিশ্চিন্তে সময় কাটানো যাবে। এখানকার আলডোনা গ্রামটা যেন পটে আঁকা। স্থাপত্য আর প্রকৃতির সৌন্দর্য হাত ধরাধরি করে মিলেমিশে আছে। 

আবহাওয়ার কারণেই এটা গোয়া ভ্রমণের পিক সিজ়ন। কিন্তু না পাবেন ঠেলাঠেলি, না পাবেন আগুন দাম। হাত-পা ছড়িয়ে ঘোরার এই সুযোগ আর কোনও দিন আসবে না। ওল্ড গোয়ায় ভিড় কিছু বেশি। সে ক্যাথিড্রাল, ক্যাথলিক চার্চ অব সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি, ব্যাসিলিকা অব বম জিসাস-এর চার্চ-কনভেন্ট চত্বরে অল্পবয়সি পর্যটকের ভিড়। এই অঞ্চলের স্থাপত্যগুলোও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। 

সাউথ গোয়ার অন্যতম সেরা বিচ পালোলেম। প্রাকৃতিক ভাবেও, সাজানোর দিক থেকেও। সারি দিয়ে রিসর্ট, বিচের উপরে কাফে, কটেজে থাকার ব্যবস্থা। সমুদ্রস্নান তো করাই যাবে, আছে হরেক ওয়াটার স্পোর্টসও, নয়তো কাফেতে বসে গোয়ান ফুড। সদ্য ধরা সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, স্কুইড সাজানো রয়েছে। বেছে নিলেই গোয়ান মশলায় রান্না হয়ে চলে আসবে পাতে। সমুদ্র দেখতে দেখতে কিংফিশ রাওয়া ফ্রাই বা ভাত আর ম্যাকারেল কারি খাওয়ার মতো আলস্যযাপন আর কীই বা হতে পারে? রাত নামলে বিচের উপর টেবিল পেতে দেওয়া হয়, জ্বলে ওঠে মোমবাতি। 

সাউথ গোয়ায় চান্দোর বা বেনোলিমের মতো গ্রামগুলো নিজের রূপেই অপরূপ। ঘন সবুজ প্রকৃতি আর তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বাড়ি-রাস্তাঘাট মুগ্ধ করবেই। উপরি পাওনা, কয়েকশো বছরের পুরনো ব্রেগানজ়া হাউস বা ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা গোয়া চিত্রা নৃতাত্ত্বিক মিউজ়িয়ামে ঢুকতে পারার সুযোগ। মেনেজ়েস ব্রেগানজ়া পরিবারের সদস্যেরাই তাঁদের বাড়ির কিছুটা অংশ ঘুরিয়ে দেখান। চোখ ধাঁধিয়ে যায় প্রাসাদোপম বাড়ির ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার দেখে। দাম জানা নেই, কিন্তু অ্যান্টিক ভ্যালু নিশ্চিত ভাবেই মারাত্মক।

যেতে পারেন দুধসাগর ফলস। পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা গোয়ার পূর্বাঞ্চল একেবারে অন্য রকম। পায়ে হেঁটে যখন জলপ্রপাতের কাছে পৌঁছলাম, ঘাড় তুলে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। কোন উঁচু থেকে দুধসাদা জলধারা নেমে আসছে, ঠাহর করা যায় না। তার ফাঁক দিয়েই চলে গিয়েছে কোঙ্কন রেলের লাইন। প্রকৃতি আর মানুষ, দুইয়েরই বিস্ময় গোয়া!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Goa, #Travelling

আরো দেখুন