প্রকৃতির কোলে পিকনিক করতে যেতে পারেন এই স্পটে
শীতকাল মানেই বাঙালির ‘টু ডু লিস্ট’- এর সবার ওপরে থাকে পিকনিক। উত্তর থেকে দক্ষিণ পুরো রাজ্য জুড়েই শীতকালে পিকনিক কালচার চলে রমরমিয়ে। দক্ষিণবঙ্গে বেশ কিছু প্রাকৃতিক পিকনিক স্পটের পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি পিকনিক স্পট তৈরি করা হলেও উত্তরবঙ্গের পিকনিক স্পটগুলির অধিকাংশই প্রকৃতিসৃষ্ট। পাহাড়, জঙ্গল, নদীতে ঘেরা উত্তরবঙ্গের চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পিকনিক স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উত্তরবঙ্গের এমন পিকনিক স্পটের নাম হল ঝান্ডি ইকো হাট।
জলপাইগুড়ি জেলার ঝান্ডি ইকো পার্ক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এমন একটি জায়গা। মালবাজার থেকে ৩২ কিলোমিটার দুরে লোয়ার ফাগু চা-বাগানের ভিতর দিয়ে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নেমে সবুজ বাগান দেখার লোভ জাগে নিজের অজান্তেই। তবে, গন্তব্য ঝান্ডি ইকো পার্কে পৌঁছলেই মন কেড়ে নেয় সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যই।
চা-বাগানের দৃশ্য এক রকম। নদীর ধারের চার পাশের দৃশ্য অন্য রকম। কোনওটার চেয়ে কোনওটাই কম নয়। একদিনের পিকনিক ছেড়ে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে মনকে আকুল করে। এখানকার এই নদীর ধারেই বড় বড় ছাতা ও খড়ের ঘর তৈরি করে পিকনিক স্পটটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।
রোজকার সাধারণ কাজে এই নদীর জলই ব্যবহার করা হয়। তবে, রান্না ও খাওয়ার জল বয়ে নিয়ে আসতে হয় একটু দূর থেকে। কারণ, প্রবহমান নদীর জল ব্যবহারের উপযোগী হলেও খাওয়ার জন্য কতটা উপযোগী, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
পাহাড়ি এই ঢালে স্থানীয় বাসিন্দারা গাড়ি প্রতি ৫০ টাকা করে নেন জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য। এখানে এই পিকনিক স্পটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকানপাট। হয়েছে কিছু কর্মসংস্থানও। শহর থেকে দূরে গ্রাম্য এই মানুষগুলোর রুজিরুটির ভাবনা কিছুটা স্বস্তি পায় শীতকালের পিকনিক-পিপাসু মানুষের কাছ থেকে।
জায়গা সাফ করে দেওয়া কিংবা জিনিস আনা-নেওয়া করায় কিছুটা পারিশ্রমিক পেয়ে কয়েকটা দিনের খাদ্যসংস্থান হওয়ায় এ সময় তাঁদের মুখে হাসি ফোটে। এত সুন্দর একটি পিকনিক স্পটটিকে সুন্দর করে রাখার দায়িত্ব সকলেরই। কিন্তু পিকনিক করতে এসে জায়গা নোংরা করে রাখার প্রবণতা ইদানীং উত্তরোত্তর বাড়ছে।
পিকনিক স্পটে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর, এমন জিনিসপত্র না আনাই শ্রেয়। পরিবেশের সবচেয়ে বড় শত্রু থার্মোকল আর প্লাস্টিক। তার বদলে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করলে তা সকলের পক্ষেই হিতকর। সবাই যদি নিজেরাই জায়গাটিকে ব্যবহার করে দায়িত্ব নিয়ে সাফ করে দেন, তাহলে এমন সুন্দর স্থান তার আকর্ষণীয়তা হারায় না।
পাশাপাশি, পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা থাকলে অত দূর থেকে কাউকে জল বয়ে অানতে হয় না। সরকার থেকে প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত, তাহলে জায়গাগুলির পরিবেশ রক্ষা পেত। নিয়ম রয়েছে, কিন্তু সে নিয়ম মান্যতা পাচ্ছে কি না। তা দেখা হচ্ছে কোথায়! এবং এই উদাসীনতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উত্তরের এই সুন্দর জায়গাগুলি।