আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে মোদী সরকারের তুলোধনা করল আমেরিকা

February 5, 2021 | 2 min read

কৃষক আন্দোলনে মোদি সরকারের অবস্থানের সমালোচনায় এবার খোদ আমেরিকা। যে কোনও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন গণতন্ত্রেরই হাতিয়ার বলে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল সদ্য শপথ নেওয়া জো বাইডেনের মার্কিন সরকার। ভারতের কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রশাসন বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে কৃষি আইনের (Farm Laws) অভিপ্রায়কে সমর্থন করেছে ঠিকই। কিন্তু একথাও জানিয়েছে, গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার আছে। ইন্টারনেট সহ কোনও তথ্য আদানপ্রদানের অধিকারও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ আন্দোলনের অজুহাতে যেভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সেটাই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকার। আর কৃষক আন্দোলন (Farmers Protest) এভাবে বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করায় মোদি সরকার রীতিমতো বিব্রত। পপস্টার রিহানা ও পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। দু’লাইনের ট্যুইট। কিন্তু তার পাল্টা হিসেবে তেড়েফুঁড়ে নেমেছে কেন্দ্র। বুধবার সরকার ও গোটা মন্ত্রিসভার বিবৃতি থেকে শুরু হয় প্রতিক্রিয়া। সরকারের সমর্থনে দেশের বহু সেলেব্রিটিও দিনভর ট্যুইট করেছেন। বৃহস্পতিবার আরও একধাপ এগিয়ে চক্রান্ত ও অশান্তি সৃষ্টির প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেটা থুনবার্গের প্রচারের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিস এফআইআর করেছে। যদিও দিল্লি পুলিসের স্পেশাল কমিশনার প্রবীর রঞ্জন বলেছেন, আমরা কোনও বিশেষ ব্যক্তির নামে এফআইআর করিনি। ‘টুলকিট’ শেয়ারের নামে অশান্তি ছড়ানোর যে প্ররোচনা হচ্ছে, তারই তদন্ত হবে। উল্লেখ্য, গ্রেটা থুনবার্গ ট্যুইট করে বলেছেন, কীভাবে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে হবে সেই ‘টুলকিট’ তিনি শেয়ার করছেন।

অন্যদিকে বিরোধীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মোদি সরকারের অতি সক্রিয়তা দিল্লির কৃষক আন্দোলনকে সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করছে। কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীদের বক্তব্য, কয়েকজন বিদেশি সেলেব্রিটি একটা দুটো ট্যুইট করার পর একটা গোটা সরকার এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েই আরও বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ দিল। বিরোধীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের এরকম অপরিণত আচরণের কোনও দরকারই ছিল না। এদিকে দিল্লি পুলিস এফআইআর করার পর গ্রেটা থুনবার্গ বৃহস্পতিবার কৃষকদের প্রতি সমর্থনকে আরও তীব্র করেছেন। নতুন করে জানিয়ে দিয়েছেন, যতই হুমকি আসুক, যতই তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ চলুক, তিনি ভারতের কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে অনড় থাকবেন। এমনকী তিনি বিশ্ববাসীকে জানান, কীভাবে ভারতের কৃষকদের পাশে থাকতে হবে, তার প্রক্রিয়াও আমি জানিয়ে দিচ্ছি। তাঁর বক্তব্য, কোনও বাধাই আমাকে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো থেকে আটকাতে পারবে না। বুধবার পর্যন্ত কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত পশ্চিমী প্রতিক্রিয়া সীমিত ছিল রিহানা, গ্রেটা থুনবার্গ কিংবা মীনা হ্যারিসের মতো কিছু বিদেশি সেলেব্রিটির ট্যুইটের মধ্যে। কিন্তু ভারত সরকারের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর ক্রমেই কৃষক আন্দোলন আন্তর্জাতিক একটি বিতর্ক তৈরি করেছে। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ হল, এবার মার্কিন সরকার মুখ খুলেছে। আমেরিকা (America) সমর্থন করেছে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, যে কোনও সক্রিয় গণতন্ত্রেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে আমরা সম্মান করি। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও ঠিক এটাই বলেছে। আমরা মনে করি, দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনাই সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে সাধারণভাবে আমরা ভারতের কৃষিতে বেসরকারি লগ্নির পথ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা ইন্টারনেট সহ নিরবচ্ছিন্ন তথ্য পাওয়ার অধিকারের পক্ষে। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্যতম হাতিয়ার।

ভারতের অন্দরেও সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে বিরোধীরা। যদিও বিরোধী কর্মসূচিতে ফাটলের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। কারণ, কংগ্রেসকে (Congress) বাদ দিয়েই বৃহস্পতিবার গাজিপুরে (Gazipur) কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যায় বিরোধী জোটের একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল। ফিরে এসে ওই দল লোকসভার স্পিকারকে একটি রিপোর্ট জমা দিয়ে জানায়, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষকদের আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Narendra Modi, #america, #Farmer Protest

আরো দেখুন